Sunday, August 11, 2019

ভাগে কোরবানির নিয়মকানুন

ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। মুসলিম উম্মাহর সার্বজনীন দু’টি উৎসবের অন্যতম একটি এই ঈদ। ঈদুল আযহার প্রধান আকর্ষণ পশু কোরবানি করা। নিজের অর্থে কেনা পশুটি আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে জবাই করার মাধ্যমে একজন প্রকৃত মুসলমান মূলত নিজেকে আল্লাহর কাছে সমপর্ণের শিক্ষা নেয়।
ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। মুসলিম উম্মাহর সার্বজনীন দু’টি উৎসবের অন্যতম একটি এই ঈদ। ঈদুল আযহার প্রধান আকর্ষণ পশু কোরবানি করা।

নিজের অর্থে কেনা পশুটি আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে জবাই করার মাধ্যমে একজন প্রকৃত মুসলমান মূলত নিজেকে আল্লাহর কাছে সমপর্ণের শিক্ষা নেয়। 

পশু কোরবানির অনেক ফজিলত রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কোরবানির পশু কেনা ও জবাই সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা। (মাওলানা আশরাফ আলি থানভি রহ. কর্তৃক প্রণীত বেহেশতি জেওর থেকে গৃহিত)

মাসআলা: কেউ চাইলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ হয়ে কোরবানি করতে পারে। এছাড়া মৃত আত্মীয়-স্বজন, জীবিত আত্মীয়-স্বজনের পক্ষ থেকেও কোরবানি করা জায়েজ আছে। 

মাসআলা: যদি কেউ নিজের খুশিতে কোনো মৃত ব্যক্তির সওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশে কোরবানি করে, তবে তা জায়েজ আছে এবং ওই গোশত নিজেও খেতে পারবে এবং যা কে ইচ্ছা দিতেও পারবে।

মাসআলা: যদি একটি গরুতে সাত জনের কম ৫/৬ জন শরিক হয় এবং কারো অংশ সাতভাগের কম না হয়; (যেমন, ৭০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনলে কারো অংশে যেন দশ হাজার টাকা কম না হয়) তবে সবার কোরবানি জায়েজ হবে। আর যদি আট জন অংশীদার হয়, কবে কারো কোরবানি বৈধ হবে না।

মাসআলা: যদি গরু কেনার আগে সাতজন অংশীদার হয়ে সবাই মিলে কেনে, তবে তা উত্তম, আর যদি কেউ একা একটি গরু কোরবানির জন্য কেনে এবং মনে মনে ইচ্ছা রাখে যে, পরে আরো লোক শরিক করে তাদের সঙ্গে মিলে কোরবানি করবে, তবে সেটাও জায়েজ আছে। কিন্তু যদি গরু কেনার সময় অন্যকে অংশীদার করার ইচ্ছা না থাকে, বরং একাই কোরবানির নিয়ত করে থাকে, কিন্তু পরে অন্যকে অংশীদার করতে চায়, এমতাবস্থায় যদি ওই ক্রেতা লোকটি গরিব হয় এবং তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব না থাকে, তবে সে তার কেনা পশুতে এখন অন্য কাউকে অংশীদার করতে পারবে না, বরং একা একাই গরুটি কোরবানি করতে হবে (যার ওপর কোরবানি ওয়াজিবই হয়নি তার জন্য প্রযোজ্য)। আর যদি ওই ক্রেতা সম্পদশালী হয় এবং তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে, তবে ইচ্ছা করলে পরে অন্য অংশীদার নিতে পারবে।  

মাসআলা: যদি কোরবানির পশু হারিয়ে যায় এবং আরেকটি পশু দ্রুত কেনার পর যদি প্রথম পশুটি পাওয়া যায়, এমতাবস্থায় ক্রেতা যদি সম্পদশালী হয়, তবে যে কোনো একটি পশু কোরবানি করা ওয়াজিব হবে। আর যদি লোকটি গরিব হয়, তবে দু’টো পশুই কোরবানি করা তার ওপর ওয়াজিব হবে (যার ওপর কোরবানি ওয়াজিবই হয়নি তার জন্য প্রযোজ্য)।
মাসআলা: কোরবানির পশু কেনার পর যদি সেটি বাচ্চা প্রসব করে, তবে ওই বাচ্চাটিকেও কোরবানি করে গরিব মিসকীনদের দিয়ে দেবে, নিজে খাবে না। তবে জবাই না করে সেটি কোনো গরিবকে দান করে দেওয়াও জায়েজ।

মাসআলা: গর্ভবতী পশু কোরবানি করা জায়েজ আছে। যদি জবাই করার পর পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায়, তবে সে বাচ্চাটিও জবাই করতে হবে।

মাসআলা: সাতজন মিলে অংশীদার হয়ে যদি একটি গরু কোরবানি করে, তবে গোশত নিজেদের ধারণা অনুযায়ী ভাগ করা যাবে না। দাঁড়িপাল্লা দিয়ে মেপে সমান সমান ভাগ করা উচিত। অন্যথায় যদি ভাগের মধ্যে তারতম্য হয়ে যায়, তবে সুদ হয়ে যাবে এবং গোনাহগার হবে। অবশ্য যদি গোশতের সঙ্গে মাথা, পা বা চামড়াও ভাগ করে দেওয়া হয়, তবে যে ভাগে মাথা, পা, চামড়া থাকবে, সে ভাগে গোশত কম হলেও জায়েজ হবে, যত কমই হোক। কিন্তু যে ভাগে গোশত বেশি সে ভাগে মাথা, পা, বা চামড়া দিলে সুদের মতো হবে এবং গুনাহ হবে।

মাসআলা: ছাগলের বয়স পূর্ণ এক বছরের কম হলে জায়েজ হবে না। এক বছর পূর্ণ হলে জায়েজ হবে। গরু, মহিষ দুই বছরের কম হলে কোরবানি জায়েজ হবে না। পূর্ণ দুই বছর হলে জায়েজ হবে। উট পাঁচ বছরের কম হলে জায়েজ হবে না। দুম্বা এবং ভেড়ার হুকুম ছাগলের মতো। কিন্তু ছয় মাসের বেশি বয়সের দুম্বার বাচ্চা এমন মোটাতাজা হয় যে এক বছরের দুম্বার পালে ছেড়ে দিলে সেটিকে আলাদা করে চেনা না যায়, তবে সেই দুম্বার বাচ্চাও কোরবানির জন্য জায়েজ আছে, অন্যথায় নয়। কিন্তু ছাগলের বাচ্চা যদি এরকম মোটা তাজাও হয়, তবুও এক বছর পূর্ণ না হলে কোরবানি জায়েজ হবে না।

মাসআলা: যে পশুর চোখ দু’টি অন্ধ, অথবা একটি চোখ পূর্ণ অন্ধ বা একটি চোখের তিনভাগের একভাগ বা আরও বেশি দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে, তবে সে পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। এমনিভাবে যে পশুর একটি কানের বা লেজের এক তৃতীয়াংশ বা তার বেশি কেটে গেছে, সেটিও কোরবানির জন্য জায়েজ নয়।

মাসআলা: যে পশু এমন খোঁড়া যে মাত্র তিন পায়ের ওপর ভর করে চলে, চতুর্থ পা মাটিতে লাগে না, অথবা মাটিতে লাগে বটে, কিন্তু তার ওপর ভর দিতে পারে না, এমন পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। আর যদি খোঁড়া পায়ের উপরও ভর দিয়ে খুড়িয়ে চলে, তবে সেরকম পশুর কোরবানি জায়েজ আছে।

মাসআলা: পশুটি যদি এমন জীর্ণ ও শুকনো হয় যে তার হাড়ের মধ্যের মগজও শুকিয়ে গেছে, তবে এমন পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। হাড়ের ভেতরে মগজ যদি না শুকিয়ে থাকে, তবে কোরবানি জায়েজ আছে।

মাসআলা: যে পশুর একটি দাঁতও নেই, এমন পশুর কোরবানি জায়েজ হবে না। আর যদি দাঁত পড়ে থাকে এবং অবশিষ্ট দাঁতের সংখ্যা যদি বেশি হয় তবে কোরবানি জায়েজ হবে।

মাসআলা: যে পশুর জন্মলগ্ন থেকে কান নেই, সেটার কোরবানি জায়েজ নয়। কান আছে কিন্তু খুব ছোট, তবে সেটার কোরবানি জায়েজ।

মাসআলা: যে পশুর জন্ম থেকে শিং হয়নি কিংবা শিং ছিল, কিন্তু ভেঙে গেছে, তবে এমন পশু দিয়ে কোরবানি জায়েয আছে। অবশ্য যদি একবোরে মূল থেকে ভেঙে যায়, তবে কোরবানি জায়েজ নয়।

মাসআলা: যে পশুকে খাসি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সে পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ আছে। এমনিভাবে যে পশুর গায়ে বা কাঁধে দাদ বা খুজলি হয়েছে সেটিরও কোরবানি জায়েজ। অবশ্য খুজলির কারণে যদি পশু একবোরেই জীর্ণ হয়ে থাকে, তবে কোরবানি জায়েজ হবে না।

মাসআলা: ভালো পশু কেনার পর যদি এমন কোনো ত্র“টি দেখা দেয়, যার কারণে কোরবানি জায়েজ হয় না, তবে ওই পশুটি রেখে অন্য একটি পশু কিনে কোরবানি করতে হবে (যার ওপর কোরবানি ফরজ)। অবশ্য যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, নিজেই আগ্রহ করে কোরবানি করার জন্য কেনে, সে ওই পশুই কোরবানি করবে। অন্য আরেকটি পশু কেনার প্রয়োজন নেই।

মাসআলা: কোরবানির মাংস নিজে খাওয়া এবং নিজের পরিবারবর্গকে খাওয়ানোতে কোনো দোষ নেই। আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়া দেওয়া এবং গরিব মিসকীনকেও দান করা ভালো। কোরবানির মাংস ভাগের সর্বোত্তম পন্থা হলো- তিন ভাগ করে এক ভাগ গরিবদের দান করা, একভাগ আত্মীয়দের দেওয়া ও একভাগ নিজে রাখা। যদি কেউ এর চেয়েও কম বা বেশি করে তাতে গুনাহ হবে না।

মাসআলা: কোরবানির চামড়া এমনিতেই দান করে দেওয়া মুস্তাহাব (ভালো)। কিন্তু যদি চামড়া বিক্রি করে, তবে এর মূল্য হিসেবে প্রাপ্য ওই টাকাটাই গরিবকে দান করতে হবে। ওই টাকা নিজে খরচ করে যদি অন্য টাকা দান করে, তবে আদায় হয়ে যাবে, কিন্তু অনুত্তম হবে।

মাসআলা: কোরবানির চামড়ার দাম মসজিদ মেরামত বা অন্য কোনো নেক কাজে খরচ করা জায়েজ নয় বরং গরিবকে দান করতে হবে।

মাসআলা: যদি চামড়া নিজের কাজে ব্যবহার করে যেমন, কিছু তৈরি করে, তবে এটাও জায়েজ আছে।

মাসআলা: কোরবানির পশু জবাইকারী ও মাংস প্রস্তুতকারীর পারিশ্রমিক আলাদাভাবে দিতে হবে, কোরবানির মাংস, চামড়া, মাথা বা পা দিয়ে এর বিনিময় দেওয়া যাবে না।

মাসআলা: কোরবানির পশুতে যদি কোনো পোশাক থাকে, তবে তা এবং সঙ্গে থাকা রশি বা দড়িও গরিবদের দান করতে হবে, নিজেদের কাজে লাগানো যাবে না।

মাসআলা: গরিবের উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, কিন্তু যদি কোরবানির নিয়ত করে পশু কেনে, তবে তার নিয়তের কারণে সেই পশু কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যাবে।

মাসআলা: কারো কোরবানি ওয়াজিব ছিল, কিন্তু কোরবানির তিনটি দিনই চলে গেল অথচ কোরবানি করলো না। এমতাবস্থায় একটি বকরি বা ভেড়ার মূল্য দান করতে হবে। আর যদি বকরি কিনে থাকে, তবে ওই বকরিটিই দান করতে হবে।
মাসআলা: যদি কেউ কোরবানির মান্নত করে এবং যে উদ্দেশে মান্নত করেছিল সেটা যদি পূর্ণ হয়, তবে গরিব হোক বা ধনী হোক, তার ওপর ওই কোরবানি করা ওয়াজিব হবে। কিন্তু মান্নতের কোরবানির গোশত গরিব মিসকীনের হক হবে, নিজে খাওয়া যাবে না। যদি নিজে খায় বা কোনো ধনীকে দেয়, তবে যে পরিমাণ খেয়েছে বা ধনীকে দিয়েছে সেই পরিমাণ পুনরায় গরিবদের দান করতে হবে।

মাসআলা: কিন্তু যদি কোনো মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর আগে অছিয়ত করে যায়, তবে সেই কোরবানির মাংস পুরোটাই দান করা ওয়াজিব হবে।

মাসআলা: কারো অনুপস্থিতিতে যদি অন্য কেউ তার পক্ষ থেকে তার বিনা অনুমতিতে কোরবানি করে, তবে কোরবানি হবে না। আর যদি কোনো পশুর মধ্যে অনুপস্থিত ব্যক্তির অংশ তার বিনা অনুমতিতে সাব্যস্ত করে, তবে অন্যান্য অংশীদারের কোরবানিও হবে না।

মাসআলা: যদি কোনো ছাগল কারো কাছে ভাগে বা প্রতিপালনের জন্য দেওয়া হয় এবং তার কাছ থেকে কিনে কেউ কোরবানি করে, তবে তার কোরবানি জায়েজ হবে না। কারণ, ওই লোক পশুর মালিক হয়নি। আসল মালিকই প্রকৃত মালিক। আসল মালিকের কাছ থেকে কিনলে তবে জায়েজ হবে।
মাসআলা: যদি একটি গরু কয়েকজন মিলে কোরবানি করে এবং প্রত্যেকেই গরিব-মিসকীনকে বিলিয়ে দেওয়া বা রান্না করে খাওয়ানোর নিয়ত করে, তবে সেটাও জায়েজ আছে। অবশ্য যদি ভাগ করতে হয়, তবে দাঁড়িপাল্লায় সমান ভাগ করে নিতে হবে।

মাসআলা: কোরবানির চামড়ার পয়সা পারিশ্রমকি হিসেবে দেওয়া জায়েজ নয়। কারণ, সেটা দান করে দেওয়া জরুরি

Saturday, June 1, 2019

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌”র ক্ষমতা

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌

অর্থাৎ, আল্লাহ্‌ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য অন্য কোন সত্য ইলাহ্‌ নেই। এই কথা যদি কেউ সত্যতার সাথে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উচ্চারন করে, এ কথার অর্থ যা বলে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে, বিশ্বাস এবং চালচলনে এই কথাকে বাস্তবিক রূপদান করে তাহলে ব্যক্তি ও সমাজ উভয় জীবনেই একথার প্রভাব আসলেই চমৎকার এবং প্রশংসনীয়।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর তিনটি উল্লেখযোগ্য ক্ষমতাঃ

[১] গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌কে একত্রীকরণঃ

একথা গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌কে ঈমানের শক্তিতে বলীয়ান করবে। ফলে তারা বাতিল শক্তি তথা তাদের শত্রুদের বিপক্ষে সংগ্রামে বিজয়ী হবে। আর এটা তখনই সম্ভব যখন আমরা সকলেই আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন কর্তৃক মনোনীত একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামকে অনুসরণ করব, মেনে চলব। যখন আমাদের আকীদাহ্‌ তথা ধর্মীয় বিশ্বাস হবে এক ও অভিন্ন। মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ “আর তোমরা একযোগে আল্লাহ্‌র রজ্জুকে সুদৃঢ়রূপে ধারন কর ও বিভক্ত হয়ে যেয়ো না।” [সূরা আল ইমরান; ৩:১০৩]
“আর তারা যদি তোমাকে প্রতারিত করার ইচ্ছা করে তবে তোমার জন্যে আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট, তিনিই তোমাকে স্বীয় সাহায্য দ্বারা এবং মু’মিনগণ দ্বারা শক্তিশালী করেছেন। আর তিনি মু’মিনদের অন্তরে প্রীতি ও ঐক্য স্থাপন করেছেন, তুমি যদি পৃথিবীর সমুদয় সম্পদও ব্যয় করতে তবুও তাদের অন্তরে প্রীতি, সদ্ভাব ও ঐক্য স্থাপন করতে পারতে না; কিন্তু আল্লাহ্‌ই ওদের পরস্পরের মধ্যে প্রীতি ও সদ্ভাব স্থাপন করে দিয়েছেন, নিঃসন্দেহে তিনি মহাশক্তিমান, মহাকৌশলী।” [সূরা আনফাল; ৮:৬২-৬৩]
আকীদাহ্‌ তথা বিশ্বাসগত পার্থক্যের কারনেই মুসলিম উম্মাহ্‌র মধ্যে আজ এতো বিভেদ, অনৈক্য, বিভ্রান্তি আর বিশৃঙ্খলা। একমাত্র এই কারনেই মুসলিম উম্মাহ্‌র ভিতর আজ এতো দ্বন্দ্ব আর হানাহানির সৃষ্টি হয়েছে। মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ
“নিশ্চয় যারা নিজেদের দ্বীনকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই, তাদের বিষয়টি নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র হাওলায় রয়েছে, পরিশেষে তিনি তাদেরকে তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবিহিত করবেন।” [সূরা আন’আম; ৬:১৫৯]
“কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুভাগে বিভক্ত করেছে; প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়েই আনন্দিত।” [সূরা মু’মিনূন; ২৩:৫৩]
আর তাই মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃতঅর্থে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবেনা যতক্ষণ না তারা ঈমান এবং আকীদাহ্‌ সম্পর্কে যথার্থ এবং বিশুদ্ধ উপলব্ধি অর্জন করতে পেরেছে। এখানেই নিহিত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর তাৎপর্য। একথার তাৎপর্য উপলব্ধি না করে কারোর পক্ষে ঈমান ও আকীদাহ্‌গত পরিশুদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বে এবং পরে আরবের অবস্থার দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা যায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর কী ক্ষমতা।

[২] শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন:

যে সমাজ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর শিক্ষায় বিশ্বাসী এবং এর শিক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেয় সেই সমাজে বিরাজ করে শুধুই শান্তি ও নিরাপত্তা। এমন সমাজের প্রতিটি মানুষই কেবলমাত্র সেই কাজের ব্যপারে যত্নশীল হবে যা আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন তাদের জন্য হালাল বা বৈধ ঘোষণা করেছেন। পক্ষান্তরে, তারা সেই সমস্ত কাজ পরিহার করে চলবে যা তিনি হারাম বা অবৈধ ঘোষণা করেছেন। সমাজের প্রতিটি মানুষই তখন তাদের এক ও অভিন্ন আকীদাহ্‌ তথা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অনুসরণ করে সকল কাজ-কর্ম সম্পাদন করবে। কারণ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর দাবী হল, যে কেউ এই কথার মৌখিক স্বীকৃতি দেবে তাকে এর সত্যতা বাস্তবায়ন করতে হবে কর্মের মাধ্যমে। কর্মহীন মৌখিক ঐ স্বীকৃতি একটি অন্তঃসার শূন্য স্লোগান ছাড়া কিছুই নয়। কাজেই কালিমার শিক্ষায় বিশ্বাসী এবং সেই শিক্ষাকে মেনে চলে এমন সমাজের লোকদেরকে দ্বারা কখনও জুলুম-অত্যাচার, অন্যায়, পারস্পারিক হানাহানি ইত্যাদি সংঘটিত হতে পারেনা। এমন সমাজের লোকেরা গভীর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সৎকর্ম সম্পাদনের জন্যে পরস্পরকে সহযোগিতা করবে এবং ভালবাসবে। আর তাদের এই পারস্পারিক সহযোগিতা ও ভালবাসা হবে কেবলমাত্র আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের জন্যে, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ “মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই।” [সূরা হুজুরাত; ৪৯:১০]
বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত সে সব আরবদের জীবনে যারা একসময় ইসলাম মেনে চলত না। অথচ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌” এর পরশে তাদের জীবনে এসেছিল আমূল পরিবর্তন। ইসলাম পূর্ব সময়ে তাদের জীবন ছিল পারস্পারিক মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, খুনাখুনি, লুটতরাজ ইত্যাদিতে জর্জরিত। সেই মানুষগুলোই যখন গ্রহণ করল তখন সব কিছু বদলে গেল। যারা রক্তের বদলে রক্ত চাইত তারা ইসলামের কারনেই শান্তি সৌহার্দ আর সম্প্রীতির এক অমায়িক বন্ধনে আবদ্ধ হল। যারা ছিল চরম শত্রু তারাই হল পরম বন্ধু। এই হল ইসলাম তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর ক্ষমতা। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ “মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহ্‌র রাসূল; আর যারা এর সাথে আছে তারা কাফিরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরে সহানুভূতিশীল।” [সূরা ফাত্‌হ; ৮৪:২৯]
“এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র যে নেয়ামত রয়েছে তা স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে তখন তিনিই তোমাদের অন্তঃকরণে প্রীতি স্থাপন করেছিলেন, তৎপরে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ হলে।” [সূরা আল-ইমরান; ৩:১০৩]

[৩] সুমহান লক্ষ্য অর্জন:

প্রকৃত সুখ-শান্তি অর্জন, পৃথিবীতে খেলাফাত (ইসলামিক কর্তৃত্ব ও শাসন ব্যবস্থা) প্রতিষ্ঠা, ইসলামের বিশুদ্ধ চর্চা এবং সমস্ত রকম বাতিল ও শয়তানি অপশক্তির আক্রমণের বিরুদ্ধে ধৈর্য এবং নিষ্ঠার সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া- এসবের একটিও সম্ভব নয় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর বাস্তবিক প্রয়োগ ছাড়া। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ্‌ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে খেলাফাত (প্রতিনিধিত্ব) অবশ্যই দান করবেন, যেমন তিনি (প্রতিনিধিত্ব) দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্যে মনোনীত করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন; তারা শুধু আমার ইবাদত করবে, আমার সাথে কাউকে শরীক করবেনা, অতঃপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারা তো সত্যত্যাগী (ফাসিক) ।” [সূরা নূর; ২৪:৫৫]
কাজেই আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন উল্লেখিত সুমহান লক্ষ্যসমূহের অর্জনকে আমাদের জন্য শর্তসাপেক্ষ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ, আমরা এগুলো কেবল মাত্র তখনই অর্জন করতে সমর্থ হব যখন আমরা শুধু মাত্র এবং কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত এবং আনুগত্য করব, তাঁর দেয়া বিধানকে প্রশ্নাতীতভাবে মেনে চলব এবং তাঁর সাথে কোন শরীক স্থাপন করব না। আর এটাই হল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর নিহিত মর্মার্থ।

রমজানকে বিদায় জানানো

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

এক সময় আমরা রমজানের অপেক্ষা করেছি, এখন আমরা রমজানকে বিদায় দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এভাবেই আমাদের জীবন একদিন শেষ হয়ে যাবে। মানুষ বলতেই কয়েকটি দিনের সমষ্টি। একটি দিন অতিবাহিত হয় তার জীবনের একটি অংশ ঘষে পড়ে। এ রমজানও চলে যাবে, যেমন আসতে ছিল। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি রাত-দিন, মাস-বছর অতিবাহিত করেন। এতে রয়েছে মুত্তাকিদের নসিহত, উপদেশ গ্রহণকারীর জন্য উপদেশ।
এ রমজানও অন্যান্য বছরের ন্যায় চলে যাবে। সে তার আমল নামা বন্ধ করে ফেলবে, যা কিয়ামতের দিন ছাড়া খোলা হবে না। আমাগী রমজান পাব কিনা আমরাও তা জানি না। আল্লাহ সাহায্যকারী।
রমজানের জন্য কাঁদা উচিত। একজন মুমিন রমজানের জন্য কিভাবে না কাঁদবে, অথচ এ রমজানে জান্নাতের দরজাসমূহ উম্মুক্ত করা হয়। একজন গোনাগার কি জন্য রমজানের জন্য আফসোস না করবে, অথচ রমজানে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়। কেন শয়তান রমজানের কারণে জ্বলেপুড়ে না মরবে, অথচ তাতে সে আবদ্ধ থাকে। হে আল্লাহর বান্দাগণ, তোমরা এতে কাদোঁ। হে মুত্তাকিগণ, তোমরা এতে উপার্জন কর।

রমজানে নেককারদের অবস্থা :

রমজানে তারা আল্লাহর দরবারে দণ্ডায়মান থাকে, তার শাস্তিকে ভয় করে। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তারা আখেরাতকে ভয় করে এবং নিজ রবের রহমত প্রত্যাশা করে।‘ [জুমার : ৯]
তারা আল্লাহর এবাদতে নিমগ্ন থাকে, দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তাদের অন্তরে আল্লাহর চিন্তা ভিন্ন কোন চিন্তা বিরাজ করে না। তারা প্রকৃত পক্ষে দাউদ তায়ীর বাণীর অনুকরণ করে। একদিন তিনি আল্লাহর সঙ্গে কথপোকথনে বলতে ছিলেন: ‘তোমার চিন্তা আমার সমস্ত চিন্তা দূর করে দিয়েছে। তোমার চিন্তা আমার আনন্দ-বিনোদন শেষ করে দিয়েছে। তোমার সাক্ষাত ইচ্ছা আমার স্বাদ বিস্বাদ করে দিয়েছে এবং প্রবৃত্তির আড়াল হয়ে গেছে।‘ [লাতায়েফুল মাআরেফ : ৩৪৮]
এ হচ্ছে রোজাদেরর অবস্থা। তাদের স্থান মসজিদ ও লক্ষ নির্জনতা। তারা লম্বা কেরাত পড়ে, কুরআন তিলাওয়াত করে, আল্লাহর সামনে রোনাজারি করে। তারা আল্লাহ মুখি হওয়ার প্রতিজ্ঞা করে এবং রহমানের সঙ্গে মোনাজাত করে। অথচ অন্যরা তখন শয়তানের আসরে বসে থাকে, গোনাগারদের সঙ্গে আড্ডা দেয়।

তারা কি জন্য আমল করে ?

তারা কেন আমল করে? কি তাদের উদ্দেশ? কেন তাদের এতো লম্বা কেরাত? কেন তাদের এতো রাত জাগা ও পরিশ্রম করা? উত্তর : তারা লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করে। যে রাত হাজার রাতের তুলনায় উত্তম। যদি মসজিদের মুখ থাকতো, সে বলে উঠত: হে লাইলাতুল কদর, তোমায় এবাদতকারীদের দেখে নাও। হে সালাত আদায়কারী, তুমি রুকু কর, সেজদা কর। হে প্রার্থনাকারী, এ রাতে তুমি খুব প্রার্থনা কর।‘ [লাতায়েফ : ৩৪৯]
এ রমজান চলে যাবে, তবে এর রাতসমূহ এতে ক্রন্দনকারী, তওবাকারী, ইস্তেগফাকারী, তিলাওয়াতকারী ও সদকাকারীদের চেনে নেবে। তারা আল্লাহর রহমত প্রত্যাশা করে, তারা জানে যে, আল্লাহ ক্ষমাকারী, তাই তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে।
গোনাহগাররা যদি আল্লাহর মাগফেরাত সম্পর্কে না জানতো, তবে তাদের অন্তর জ্বলে যেত, তারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যেত। কিন্ত তারা যখন আল্লাহর ক্ষমার কথা স্বরণ করে, তাদের অন্তর তৃপ্তিতে ভরে যায়। তাদের কেউ বলেছেন: ‘হে আল্লাহ, আমাদের গোনাহ অনেক, কিন্তু তোমার মাগফেরাত খুব বড়। হে আল্লাহ, আমার গোনাহ ও তোমার মাগফেরাতের মধ্যে তুলনা করে দেখ।‘ [লাতায়েফ : ৩৭০]
এ হচ্ছে নেককারদের দোয়া। তারা এভাবেই রমজান অতিবাহিত করেন। তাদেরই শোভা পায় এর সমাপ্তিতে ক্রন্দন করা। কারণ, এর মর্যাদা তারা বুঝে। এতদ সত্বেও তারা ভীত থাকে, কবুল না হওয়ার ভয়ে সঙ্কীত থাকে। তারা জানে আসল বিষয় হচ্ছে কবুল হওয়া, পরিশ্রম করা নয়। অন্তরের পবিত্রতাই আসল পবিত্রতা, শরীরের পবিত্রতা নয়।
মাহরুম কত রাত জাগরণকারী, মাহরুম কত ঘুমন্ত ব্যক্তি। কত ঘুমন্ত অন্তর আল্লাহর জিকিরে মশগুল, কত জাগ্রত অন্তর আল্লাহর অপরাধে লিপ্ত। কিন্তু বান্দাদের উচিত নেককাজের জন্য চেষ্টা করা এবং তার কবুলের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করা। এটাই নেককারদের অভ্যাস।
ইয়াহইয়া ইবনে কাসির বলেছেন: ‘আল্লাহর কতক নেক বান্দাদের দোয়া ছিল, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে রমজানের নিকট সোপর্দ কর ও রমজানকে আমার নিকট সোপর্দ কর। এবং রমজানকে আমার কাছ থেকে কবুল করে নাও।‘ [হুলইয়াতুল আউলিয়া : ৩/৬৯]
ইবনে দিনার বলেন, ‘কবুল না হওয়ার ভয়, আমল করার চেয়েও বেশি কষ্টের।‘
আব্দুল আজিজ আবুদাউদ বলেন: ‘আমি তাদের খুব আমল করতে দেখেছি, তবুও আমল শেষে তারা কবুল না হওয়ার শঙ্কায় ভীত থাকত।‘ [লাতায়েফ : ৩৭৫]

আমল কবুল হওয়ার আলামত :

রমজানের পরেও ধারাবাহিক আমল করে যাওয়া আমল কবুল হওয়ার সব চেয়ে বড় আলামত। কেউ বলেছেন, ‘নেকির সওয়াব হচ্ছে, নেকির পর নেকি করা। এক নেক আমলের পর দ্বিতীয় নেক আমল করা, প্রথম আমলটি কবুল হওয়ার আলামত। যেমন নেক আমল করার পর গোনা করা, নেক আমল কবুল না হওয়ার আলামত।‘রমজান পেয়ে ও তাতে সিয়াম-কিয়াম করে, রমজানের পর গোনা করা, মূলত আল্লাহর নিয়ামতকে গোনাহের মোকাবেলায় দাঁড় করা। যদি কেউ রমজানেই রমজান পরিবর্তী গোনা করার ইচ্ছা করে থাকে, তবে তার রোজা তার ওপরই পতিত হবে এবং তওবা না করা পর্যন্ত তার জন্য রহমতের দরজা বন্ধ থাকবে।কত সুন্দর! গোনার পর নেকি করা, তাতে গোনা মিটে যায়, আর নেকির পর নেকি করা আরো সুন্দর! খুবই খারাপ নেকির পর গোনা করা, যার কারণে নেকি নষ্ট হয়ে যায়। তওবা করার পর একটি গোনা করা, তওবার পূর্বে সত্তুরটি গোনার চেয়েও খারাপ। তওবার করার পর তাওবা ভঙ্গ করা খুবই খারাপ। এবাদতের সম্মান লাভ করে গোনার অসম্মান মাথায় নেয়া বড়ই লজ্জাকর।
হে তওবাকারীরা, রমজানের পর তোমরা গোনাতে ফিরে যেয়ো না। তোমরা ঈমানের স্বাদের ওপর গোনার প্রবৃত্তি প্রধান্য দিয়ো না। তোমরা আল্লাহর জন্য ধৈর্য ধারণ কর। তিনি তোমাদের উত্তম জিনিস দান করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘যদি আল্লাহ তোমাদের অন্তরে কোন কল্যাণ আছে বলে জানেন, তাহলে তোমাদের থেকে যা নেয়া হয়েছে, তার চেয়ে উত্তম কিছু দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন, আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।‘ [আনফাল : ৭০]
হে এবাদত গোজার বান্দারা, যে সব এবাদতের মাধ্যমে তোমরা রমজানে আল্লাহর এবাদত করেছো, সে এবাদত এখনো বিদ্যমান। রমজানের সঙ্গে সঙ্গে তা চলে যায়নি। হয়তো তোমরা তা পুরোপুরি করতে পারবে না, কিন্তু একেবারে ছেড়ে দিয়ো না। বিশর হাফিকে বলা হয়েছে, ‘কতক লোক রযেছে, যারা রমজানে খুব এবাদত ও পরিশ্রম করে। তিনি বলেন: তারা খুবই খারাপ, যারা রমজান ছাড়া আল্লাহকে চিনে না। নেককার সে ব্যক্তি যে সব সময় আল্লাহর এবাদত করে। [লাতায়েফ : ৩৯৬]
এ নীতিই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জারি করে গেছেন। তিনি বলেন: ‘কম হলেও, ধারাবাহিক আমল আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয়।‘ [বুখারি : ৪৩, মুসলিম : ৭৮২]
আয়েশা রা. বলেন: ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ধারাবাহিক আমলই বেশি প্রিয় ছিল।‘ [বুখারি : ৪৩]
রমজানের রব, সব মাসেরই রব, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুমিনের আমলের শেষ নেই। হাসান রহ. বলেন,
‘আল্লাহ তাআলা মৃত্যু ছাড়া মুমিনদের আমলের জন্য কোন সময় নির্ধারণ করেননি।‘ আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘মৃত্যু আসার আগ পর্যন্ত তুমি তোমার রবের এবাদত কর।‘ [হিজর : ৯৯) লাতায়েফ : ৩৯৮]
তাদের কি লজ্জা হয় না, রমজানের সঙ্গে সঙ্গে তারা মসজিদ, কুরআন তিলাওয়াত ত্যাগ করে দেয় এবং পুনরায় গোনাতে লিপ্ত হয়। আল্লাহ, তোমার কাছে পানাহ চাই। আমাদেরকে তাদের অন্তরভুক্ত করো না। এ উপদেশ হচ্ছে তাদের জন্য যারা রমজানে রোজা রাখে ও এবাদত করে অতিবাহিত করেছে, কিন্তু যারা রমজান পেয়েও গান-বাদ্য এবং আল্লাহর অবাধ্যতায় অতিবাহিত করেছে, তাদের জন্য কি বলব?
এর চেয়ে ভাল কথা আর তাদের বলতে পারি না যে, তোমরা তোমাদের রবের নিকট তওবা কর। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘বল, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [জুমার : ৫৩]
তুমি রমজান নষ্ট করেছ, তাই তোমার পুরো জীবন তুমি নষ্ট কর না। তওবা কর, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করতে পারেন। কখনো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।

আমরা কিভাবে রমজানকে বিদায় জানাবো?

ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ. তার গভর্নদের লিখে পাঠান যে, তোমরা রমজান মাস ইস্তেগফার ও সদকার মাধ্যমে খতম কর। কারণ, সদকা রোজাদারের জন্য পবিত্রতা স্বরূপ আর ইস্তেগফার রোজার জন্য পবিত্রতা স্বরূপ। আর এ জন্য কেউ বলেছেন, ‘সদকাতুল ফিতর হচ্ছে সেজদায়ে সাহুর ন্যায়।‘ আব্দুল আজিজ তার পত্রে বলেন, ‘তোমরা আবু বকরের ন্যায় বল: তারা বলল, হে আমাদের রব, আমরা নিজদের উপর যুলক করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। [আরাফ :২৩]
  • আর যদি আপনি আমাকে মাফ না করেন এবং আমার প্রতি দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। [হুদ : ৪৭]
  • আর যিনি আশা করি, বিচার বিদসে আমার ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দেবেন। [শুআরা : ৮২]
  • হে আল্লাহ, আমি আমার ওপর যুলক করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা কর।‘ [কাসাস : ১৬]
  • আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম। [আম্বিয়া : ৮৭, লাতায়েফ : ৩৮৭]

ঈদের রাতের আমল :

রমজানের মাগফেরাত যেহেতু রোজা ও কিয়ামের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তাই আল্লাহ তাআলা রমজান শেষে তার শুকরিয়া আদায় ও তাকবির বলার নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি বলেন: ‘তার জন্য তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।[বাকারা : ১৮৫]
এর ব্যাখ্যায় ইবনে মাসউদ বলেন: আল্লাহর পরিপূর্ণ তাওয়া অর্জন করা। অর্থাৎ তার এবাদত করা গোনা না করা। তার স্বরণ করা তাকে না ভুলা এবং তার শুকরিয়া আদায় করা তার কুফরি না করা।‘  ঈদের দিনের সূর্যাস্ত থেকে ঈদের সালাত আদায় পর্যন্ত তাকবির বলা বিধেয়। পুরুষরা মসজিদে, বাজারে ও ঘরে জোড়ে জোড়ে তাকবির বলবে। [তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম : ২/৪৪৬]

ঈদের দিনের সুন্নত :

সালাতে যাওয়ার আগে ঈদের দিন খেজুর খাওয়া। বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খাওয়া সুন্নত। আনাস রা. বলেন: ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর না খেয়ে ঈদের সালাতের জন্য বের হতেন না, তিনি বিজোর সংখ্যায় খেজুর খেতেন।‘ [বুখারি : ৯৫৩]
নারীরাও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে ঈগগাহে যাবে। তারা সালাতে ও জিকিরে অংশ গ্রহণ করবে।আমাদের অনেকেই নিজ সন্তানদের পোষাক আশাকের ক্ষেত্রে উদাসীন থাকি, এটা মোটেও ঠিক নয়। বরং তাদের ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক পোশাক-আষাক পড়তে বাধ্য করা।আবার অনেককে দেখা যায়, ঈদ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বের হয়ে যায়, গান-বাদ্যতে রাত কাটিয়ে দেয়, এটা কখনো ঠিক নয়। বরং এবাদত, ইস্তেগফার ইত্যাদির মাধ্যম ঈদ অতিবাহিত করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে তওফিক দান করুন।
সমাপ্ত

মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসূমহ

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
মা-বাবা ছোট শব্দ, কিন্তু এ দুটি শব্দের সাথে কত যে আদর, স্নেহ, ভালবাসা রয়েছে  তা পৃথিবীর কোন মাপযন্ত্র দিয়ে নির্ণয় করা যাবে না। মা-বাবা কত না কষ্ট করেছেন, না খেয়ে থেকেছেন, অনেক সময় ভাল পোষাকও পরিধান করতে পারেন নি, কত না সময় বসে থাকতেন সন্তানের অপেক্ষায়। সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছেন, তারাই বুঝেন মা বাবা কত বড় সম্পদ। যেদিন থেকে মা বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন সেদিন থেকে মনে হয় কী যেন হারিয়ে গেল,তখন বুক কেঁপে উঠে, চোখ থেকে বৃষ্টির মত পানি ঝরে, কী শান্তনাই বা তাদেরকে দেয়া যায়!  সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছে তারা কি মা-বাবার জন্য কিছুই করবে না?। এত কষ্ট করে আমাদের কে যে মা-বাবা লালন পালন করেছেন তাদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? অবশ্যই আছে। আলোচ্য প্রবন্ধে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মৃত মা-বাবা জন্য কী ধরনের আমল করা যাবে এবং যে আমলের সওয়াব তাদের নিকট পৌছবে তা উল্লেখ করা হলো:

১. বেশী বেশী দু‘আ করা 

মা-বাবা দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর সন্তান মা-বাবার জন্য বেশী বেশী দু‘আ করবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কী দু‘আ করবো তাও শিক্ষা দিয়েছেন । আল-কুরআনে এসেছে,
‘‘হে আমার রব, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’’ [সূরা বানী ইসরাঈলঃ ২৪]
‘‘হে আমাদের রব, রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করে দিন’’ [সুরা ইবরাহীমঃ৪১]
এছাড়া আলস্নাহ রাববুল আলামীন পিতা-মাতার জন্য দূ‘আ করার বিশেষ নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেনঃকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না’  [সূরা নুহ: ২৮]
মা-বাবা এমন সন্তান রেখে যাবেন যারা তাদের জন্য দোয়া করবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না-১. সদকায়ে জারিয়া  ২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দু‘আ করে [সহিহ মুসলিম: ৪৩১০]
মূলত: জানাযার নামায প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ স্বরূপ।

২. দান-ছাদকাহ করা, বিশেষ করে সাদাকায়ে জারিয়াহ প্রদান করাঃ

মা-বাবা বেচে থাকতে দান-সাদকাহ করে যেতে পারেন নি বা বেচে থাকলে আরো দান-সদকাহ করতেন, সেজন্য তাদের পক্ষ থেকে  সন্তান দান-সদকাহ করতে পারে। হাদীসে এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ ‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমার মা হঠাৎ মৃতু বরণ করেছেন। তাই কোন অছিয়ত করতে পারেন নি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-ছাদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে ছাদকা করলে তিনি কি এর ছাওয়াব পাবেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন।’’ [সহীহ মুসলিম:২৩৭৩]
তবে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে সাদাকায়ে জারিয়া বা প্রবাহমান ও চলমান সাদাকা প্রদান করা। যেমন পানির কুপ খনন করা, (নলকুপ বসানো, দ্বীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব ও প্রতিষ্ঠান তৈরী করা, স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কাজ করা। ইত্যাদি।
৩. মা-বাবার পক্ষ থেকে সিয়াম  পালনঃ
মা-বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় যদি তাদের কোন মানতের সিয়াম কাযা থাকে, সন্তান তাদের পক্ষ থেকে সিয়াম পালন করলে তাদের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল এমতাবস্থায় যে তার উপর রোজা ওয়াজিব ছিল। তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিসগণ রোজা রাখবে’’ [সহীহ বুখারী:১৯৫২]
অধিকাংশ আলেমগণ এ হাদীসটি শুধুমাত্র ওয়াজিব রোযা বা মানতের রোযার বিধান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে নফল সিয়াম রাখার পক্ষে দলীল নাই।

৪. হজ্জ বা উমরাহ করাঃ

মা-বাবার পক্ষ থেকে হজ্জ বা উমরাহ করলে তা আদায় হবে এবং তারা  উপকৃত হবে। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, ‘‘ জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমণ করে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হজ্জ করার মানত করেছিলেন কিন্তু তিনি হজ্জ সম্পাদন না করেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ কর। তোমার কি ধারণা যদি তোমার মার উপর ঋণ থাকতো তবে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না ? সুতরাং আল্লাহর জন্য তা আদায় কর। কেননা আল্লাহর দাবী পরিশোধ করার অধিক উপযোগী’’ [সহীহ বুখারী: ১৮৫২]
তবে মা-বাবার পক্ষ থেকে যে লোক হজ্জ বা ওমরাহ করতে চায় তার জন্য শর্ত হলো সে আগে নিজের হজ্জ-ওমরাহ করতে হবে।

৫. মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করাঃ

মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করলে তার ছাওয়াব দ্বারা তারা উপকৃত হবে। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি শিংযুক্ত দুম্বা উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন, যার পা কালো, চোখের চতুর্দিক কালো এবং পেট কালো। অতঃপর তা কুরবানীর জন্য আনা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, হে আয়েশা! ছুরি নিয়ে আস, তারপর বললেন, তুমি একটি পাথর নিয়ে তা দ্বারা এটাকে ধারালো কর। তিনি তাই করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুরি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে শুইয়ে দিলেন। পশুটি যবেহ্ করার সময় বললেন, বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ তুমি এটি মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধর এবং সকল উম্মাতে মুহাম্মাদীর পক্ষ থেকে কবুল কর”। এভাবে তিনি তা দ্বারা কুরবানী করলেন। [ সহীহ মুসলিম:৫২০৩]

৬. মা-বাবার ওসিয়ত পূর্ণ করা

মা-বাবা শরীয়াহ সম্মত কোন ওসিয়ত করে গেলে তা পূর্ণ করা সন্তানদের উপর দায়িত্ব। রাশীদ ইবন সুয়াইদ আসসাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা একজন দাসমুক্ত করার জন্য ওসিয়ত করে গেছেন। আর আমার নিকট কালো একজন দাসী আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ডাকো, সে আসল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার রব কে ? উত্তরে সে বলল, আমার রব আল্লাহ। আবার প্রশ্ন করলেন আমি কে ? উত্তরে সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসুল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে মুক্ত করে দাও; কেন না সে মু’মিনা । [সহীহ ইবন হিববান :১৮৯]

৭. মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করা 

মা-বাবার বন্ধুদের সাথে ভাল ব্যবহার করা, সম্মান করা, তাদেরকে দেখতে যাওয়া,তাদেরকে হাদিয়া দেয়া। এ বিষয়ে হাদীসে উল্লেখ আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, একবার মক্কার পথে চলার সময় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এক বেদুঈন এর সাথে দেখা হলে তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং তাকে সে গাধায় চড়ালেন যে গাধায় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উপবিষ্ট ছিলেন এবং তাঁর (আব্দুল্লাহ) মাথায় যে পাগড়িটি পরা ছিলো তা তাকে প্রদান করলেন। আব্দুল্লাহ ইবান দীনার রাহেমাহুল্লাহ বললেন, তখন আমরা আব্দুল্লাহকে বললাম: আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক! এরা গ্রাম্য মানুষ: সামান্য কিছু পেলেই এরা সন্তুষ্ট হয়ে যায়-(এতসব করার কি প্রয়োজন ছিলো?) উত্তরে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তার পিতা, (আমার পিতা) উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বন্ধু ছিলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি “পুত্রের জন্য পিতার বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভাল ব্যবহার করা সবচেয়ে বড় সওয়াবের কাজ’’ [সহীহ মুসলিম:৬৬৭৭]
মৃতদের বন্ধুদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলও আমাদেরকে উৎসাহিত করে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন বকরী যবেহ করতেন, তখনই তিনি বলতেন, এর কিছু অংশ খাদীজার বান্ধবীদের নিকট পাঠিয়ে দাও [সহীহ মুসলিম: ৬৪৩১]

৮. মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখা

সন্তান তার মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালবাসে, সে যেন পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখে’ [সহীহ ইবন হিববান:৪৩২]

৯. ঋণ পরিশোধ করা

মা-বাবার কোন ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করা সন্তানদের উপর বিশেষভাবে কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের পরিশোধ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘‘মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ তা তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়”। [সুনান ইবন মাজাহ:২৪১৩]
ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতের যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়; এমনকি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয় । হাদীসে  আরো এসেছে,যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [নাসায়ী ৭/৩১৪; তাবরানী ফিল কাবীর ১৯/২৪৮; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/২৯]

১০. কাফফারা আদায় করা   

মা-বাবার কোন শপথের কাফফারা,ভুলকৃত হত্যাসহ কোন কাফফারা বাকী থাকলে সন্তান তা পূরণ করবে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে সেটা ভিন্ন কথা) [ সূরা আন-নিসা:৯২]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘ যে ব্যক্তি কসম খেয়ে শপথ করার পর তার থেকে উত্তম কিছু করলেও তার কাফফারা অদায় করবে’’ [সহীহ মুসলিম: ৪৩৬০]
এ বিধান জীবিত ও মৃত সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। দুনিয়ার বুকে কেউ অন্যায় করলে তার কাফফারা দিতে হবে। অনুরূপভাবে কেউ অন্যায় করে মারা গেলে তার পরিবার-পরিজন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাফফারা প্রদান করবেন।

১১. ক্ষমা প্রার্থনা করাঃ

মা-বাবার জন্য আল্লাহর নিকট বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। সন্তান মা-বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। হাদীসে বলা হয়েছে, আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে হে আমার রব, আমি তো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল আসলো ? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো’’ [আল-আদাবুল মুফরাদ:৩৬]
মা-বাবা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পার্শ্বে দাঁড়ালেন এবং বললেন ‘‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য ঈমানের উপর অবিচলতা ও দৃঢ়তা কামনা কর, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে’’। [মুসনাদুল বাজ্জার :৪৪৫]
তাই সুন্নাত হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিকে কবরে দেয়ার পর তার কবরের পার্শ্বে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার জন্য প্রশ্নোত্তর সহজ করে দেয়া, প্রশ্নোত্তর দিতে সমর্থ হওয়ার জন্য দো‘আ করা।

১২. মান্নত পূরণ করা 

মা-বাবা কোন মান্নত করে গেলে সন্তান তার পক্ষ থেকে পূরণ করবে। ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,কোন মহিলা রোজা রাখার মান্নত করেছিল, কিন্তু সে তা পূরণ করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করল। এরপর তার ভাই এ বিষয়ে  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি বলরেন, তার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন কর। [সহীহ ইবন হিববান:২৮০]

১৩. মা-বাবার ভাল কাজসমূহ জারী রাখা 

মা-বাবা যেসব ভাল কাজ অর্থাৎ মসজিদ তৈরী করা, মাদরাসা তৈরী করা, দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীসহ যে কাজগুলো করে গিয়েছেন সন্তান হিসাবে তা যাতে অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা করা। কেননা এসব ভাল কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে। হাদীসে এসেছে,
‘‘ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’। [সুনান আততিরমীযি : ২৬৭০]
যে ব্যক্তির ইসলামের ভাল কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদেও সওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:২৩৯৮]

১৪. কবর যিয়ারত করা  

সন্তান তার মা-বাবার কবর যিয়ারত করবে। এর মাধ্যমে সন্তান এবং মা-বাবা উভয়ই উপকৃত হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম,অত:পর মুহাম্মাদের মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]
যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]
কবর যিয়ারত কোন দিনকে নির্দিষ্ট করে করা যাবে না। কবর যিযারত করার সময় বলবে,কবরবাসী মুমিন-মুসলিম আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক । নিশ্চয় আমরা আপনাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আল্লাহর কাছে আপনাদের এবং আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। [সুনান ইবন মাজাহ :১৫৪৭]

১৫. ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করা    

মা-বাবা কারো সাথে কোন ভাল কাজের ওয়াদা করে গেলে বা এমন ওয়াদা যা তারা বেচে থাকলে করে যেতেন, সন্তান যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [ সূরা বনী ইসরাঈল:৩৪]

১৬.কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা

মা-বাবা বেচে থাকতে কোন গুনাহের কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা বন্ধ করবে বা শরীয়াহ সম্মতভাবে সংশোধন করে দিবে। কেননা আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এবং যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহবান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোন কমতি হবে না’’। [সহীহ মুসলিম:৬৯৮০]

১৭.মা-বাবার পক্ষ থেকে মাফ চাওয়া 

মা-বাবা বেচে থাকতে কারো সাথে খারাপ আচরণ করে থাকলে বা কারো উপর যুলুম করে থাকলে বা কাওকে কষ্ট দিয়ে থাকলে মা-বাবার পক্ষ থেকে তার কাছ থেকে মাফ মাফ চেয়ে নিবে অথবা ক্ষতি পূরণ দিয়ে দিবে।  কেননা হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান নিঃস্ব ব্যক্তি কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো গরীব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরীব যে, কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমল নামা দিয়ে দেয়া হবে। এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [সুনান আততিরমিযি :২৪২৮]
সুতরাং এ ধরনের নিঃস্ব ব্যক্তিকে মুক্ত করার জন্য তার হকদারদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া সন্তানের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।অল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মা বাবার জন্য আমলগুলো করার তাওফীক দিন।
আমীন!

ঈদুল ফিতরের আনন্দ ও আমাদের করণীয়

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
প্রতি বৎসর দু’দুটি ঈদ উৎসব মুসলমানদের জীবনে নিয়ে আসে আনন্দের ফল্গুধারা। এ দু’টি ঈদের মধ্যে ঈদুল ফিতরের ব্যপ্তি ও প্রভাব বহুদূর বিস্তৃত মুসলিম মানসে ও জীবনে। পূর্ণ একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ উৎসব মুসলিম জাতির প্রতি সত্যিই মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এক বিরাট নিয়ামত ও পুরস্কার। মুসলিম উম্মার প্রত্যেক সদস্যের আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসা, মমতা ঈদের এ পবিত্র ও অনাবিল আনন্দ উৎসবে একাকার হয়ে যায়। ‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের এ জাতি একক একটি জাতি’’ মহান আল্লাহর এ ঘোষণার বাস্তবরূপটি চরমভাবে প্রকটিত হয় বিশ্বাবাসীর সামনে।
ঈদ মুসলমানদের জীবনে শুধুমাত্র আনন্দ-উৎসবই নয়, বরং এটি একটি মহান ইবাদাত যার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা খুঁজে পায়, ধনী-গরীব, কলো-সাদা, ছোট-বড়, দেশী-বিদেশী সকল ভেদাভেদ ভুলে যায় এবং সর্বশ্রেণী ও সকল বয়সের নারী-পুরুষ ঈদের জামাতে শামিল হয়ে মহান প্রভুর শুকর আদায়ে নুয়ে পড়ে। ঈদের এ মহান উপলক্ষকে সামনে রেখে আজ আমাদের এ আত্মজিজ্ঞাসা উত্থাপিত হওয়া প্রয়োজন যে, সত্যিই আমাদের ঈদ কি মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ হবার কারণ হতে পেরেছে? যে মহান স্রষ্টা তাদেরকে এরকম বিশাল আনন্দ উৎসবের অনুমোদন দিয়েছেন, তারা তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বদা তাঁকে স্মরণ রেখেছে? যে প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত হিসাবে তারা ঈদ পালন করছে, সে রাসূলের আর সকল সুন্নাতের অনুসরণ কি তারা করছে? আমার বিশ্বাস এসব প্রশ্নের সমাধানের মধ্য দিয়েই আমরা করণীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের ফিরিস্তি পেয়ে যাব।
পাশাপাশি কল্যাণ, বরকত ও আনন্দের এ শুভদিনে আমাদের সে সকল ভাই-বোনদের কথাও স্মরণ করা উচিৎ, মৃত্যু যাদেরকে এ জগত থেকে এমন এক জগতে নিয়ে গিয়েছে, যেখান থেকে ফেরার কোন উপায় নেই। সেখানে তারা পার্থিব জীবনে নিজেদের কৃতকর্মের ফলাফল ভোগ করছে। এ মহান দিবসে আমরা তাদেরকে ভুলে না গিয়ে আমাদের উচিৎ তাদের মাগফিরাতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং তাদের পথে আমাদেরকেও একদিন পা বাড়াতে হবে – মনে সব সময় এ কথা জাগরুক রাখা।
ঈদ উৎসব পালনকালে সেই সব ভাই-বোনদের কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে, যারা কঠিন পীড়ায় অসুস্থ হয়ে বাড়ীতে কিংবা হাসপাতালে পড়ে আছে। ব্যথা, যন্ত্রণা ও মানসিক পীড়নে ঈদের আনন্দ তাদের মাটি হয়ে গিয়েছে। আমাদের উচিৎ প্রথমত: আল্লাহ যে সুস্থতা ও নিরাপত্তার অশেষ নিয়ামতের উপর আমাদেরকে রেখেছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করা এবং দ্বিতীয়ত: এ সবল রোগাক্রান্তদের আরোগ্য লাভের জন্যে দোয়া করা এবং সম্ভব হলে তাদের শুশ্রষা করা।
আজ আমাদের সে সব ভাই-বোনদের কথাও বিস্মৃত হলে চলবে না, যুদ্ধ যাদেরকে সর্বস্বান্ত করেছে, গৃহহীন করেছে, দেহের রক্ত-বন্যা প্রবাহিত করেছে, বহু নরীকে করেছে বিধবা এবং হাজারো শিশুকে করেছে পিতৃহীন-এতীম; এবং সেই বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদেরকেও, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অমোঘ বিধানে যারা আজ সর্বহারা। আমরা আমাদের সাধ্যানুযায়ী আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে এদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারি এবং আল্লাহ যেন তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন সে দোয়াও করতে পারি।
প্রতি ঈদেই সবাই সাধ্যানুযায়ী নতুন নতুন মডেলের সুন্দর সুন্দর পোষাক ক্রয় করে থাকে। আমরা কি কখনো ভাবি সে-সব ভাই-বোনদের কথা দারিদ্রের কষাঘাতে যাদের জীবন জর্জরিত। নতুন পোষাক কেনা দূরে থাক, পুরানো কোন ভাল পোষাকই তাদের নেই। বরং প্রতিদিনের অন্নের প্রয়োজনীয় যোগানও তাদের নেই। আমরা যারা স্বচছল তারা কি সামান্যতম হাসিও এদের মুখে ফোটাতে পরি না? অথচ মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘নিজেদের কল্যাণের জন্য তোমরা যে উত্তম কাজ করে থাকো, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে পাবে।’’[সূরা আল-বাকারাহ: ১১০]
এ মুবারক রামাদান মাসে আমাদের অনেককেই আল্লাহ সামর্থ্য দিয়েছেন সিয়াম-সাধনা, কিয়ামুল-লাইল পালন, দান-দাক্ষিণ্য ও কুরআন অধ্যায়নের মাধ্যমে তাঁর ইবাদাত পালনের। কিন্তু ইবাদাতের এ ভরা মৌসুমেও আমাদের এমন অনেক ভাই-বোন রয়েছেন পাপের সাগরে যারা আকন্ঠ নিমজ্জিত, স্রষ্টাদ্রোহী কাজে যারা লিপ্ত, পার্থিব জীবনের মরিচিকাসম খেল-তামাশায় মগ্ন হয়ে যারা জীবনের প্রকৃত কর্তব্য ভুলে গিয়েছে। আমরা কি এদেরকে স্রষ্টার সুন্দর সরল পথের দিকে আহবান করেছি? পাপ-সাগর থেকে তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছি? তাদের সমানে সত্যের অনুপম আদর্শের গভীর সৌন্দর্যের সঠিক ও বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছি? মহান রাববুল আলামীন সমীপে এদের হিদায়াতের জন্য দোয়া করেছি?
ঈদুল ফিতর এসব প্রশ্নের সুন্দর জবাব খুঁজে পেতে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। এবারের ঈদুল ফিতরকে তেমনই অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ করার পাশাপাশি আমাদের উচিত হবে ঈদের সাথে সংশ্লিষ্ট শরয়ী বিধান মেনে চলা ও শিষ্টচারিতা রক্ষা করা। সংক্ষেপে ঈদের সে শরয়ী বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরছি।
  • এক: ঈদের আগের দিন সূর্যাস্ত থেকে শুরু করে ঈদের সালাত আদায় করা পর্যন্ত তাকবীর তথা ‘আল্লাহু আকবর’’ বলতে থাকা। এ হচ্ছে বিশ্ববাসীর সামনে মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘আর যাতে তোমরা সংখ্যাপূর্ণ কর এবং তিনি যে তোমাদেরকে হিদায়াত দিয়েছেন তার জন্য ‘আল্লাহ মহান’ বলে ঘোষণা দাও এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’’ [সূরা আল- বাকারাহঃ ১৮৫] তাকবীরের শব্দগুলো হল: ‘‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’’ পুরুষরা মসজিদে, বাজারে ও ঘরে এ তাকবীর ধ্বনি জোরে দিতে থাকবে। আর মহিলারা তাকবীর বলবে আস্তে।
  • দুই: যাকাতুল ফিতর প্রদান করা, রোযাদারের যে ভুল-বিভ্রান্তি ও পাপ হয়েছে তা মোচন করার জন্য এবং মিসকীনদের খাদ্য যোগানের উদ্দেশ্যে যাকাতুল ফিতর দেয়ার বিধান দেয়া হয়েছে। যাকাতুল ফিতর ঈদের একদিন বা দুইদিন আগেও দেয়া যায়। তবে সালাতুল ঈদের পর পর্যন্ত বিলম্ব করা যাবে না, আগেই আদায় করতে হবে।
  • তিন: ঈদের দিন সকালে গোসল করা ও সুন্দর পোষাক পরিধান করা এবং ঈদের সালাতে যাওয়ার প্রাক্কালে পুরুষদের খোশবু ব্যবহার করা উত্তম। মেয়েদের জন্যও সুন্নাত হলো পর্দার সাথে ও খোশবু ব্যবহার না করে ঈদগাহে এসে ঈদের আনন্দ ও সালাতে শরীক হওয়া।
  • চার: ঈদগাহে যাওয়ার আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুসরণ করে তিনটি বা পাঁচটি করে বেজোড় সংখ্যক খেজুর খাওয়া।
  • পাঁচ: ঈদের জামাতে শামিল হওয়া এবং পুরো খুতবা শোনা। ইমাম ইবনু তাইমিয়া সহ আরো অনেক মুহাক্কিক আলেমের মতে ঈদের সালাত ওয়াজিব, কোন ওজর ছাড়া ত্যাগ করা যাবে না। এমনকি হায়েযরতা মহিলাগণ পর্যন্ত ঈদগাহে আসবেন এবং সালাতে অংশ না নিয়ে একপ্রান্তে অবস্থান করবেন।
  • ছয়: রাসূলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ অনুসরণ করে এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা।
  • সাত: ঈদের অভিভাদন জানাতে গিয়ে, ‘‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকা’’ অর্থাৎ ‘আল্লাহ আমাদের ও আপনার পক্ষ থেকে কবুল করুন’ বলা ভাল। এছাড়া সুন্দর সুন্দর দোয়ার মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করাতে কোন অসুবিধা নেই। বরং এতে পারস্পারিক সম্পর্ক অনেক মধুর হয়ে উঠে।
  • আট: ঈদ উৎসবকে উপলক্ষ করে সকল প্রকার পাপাচার ও অশ্লীলতায় নিমজ্জিত হওয়া থেকে নিজেকে ও পরিবারকে রক্ষা করা।সর্বশেষে বলবো- সিয়াম সাধানার পবিত্র মাস রামাদানুল মুবারক ছিল মূলত: আমাদের জন্য তাকওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণ লাভের মাস, সর্বপ্রকার ইবাদাতে অভ্যস্থ হওয়ার মাস, ঈমান মযবুত করার মাস, প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে মহান চরিত্রে বিভূষিত হওয়ার মাস, কুরানের মর্ম উপলব্ধি করে জীবনের সর্বক্ষেত্রে কুরআনমুখী হওয়ার মাস, মুসলিম জাতির জেগে উঠার মাস এবং সকল প্রকার অনাহুত শক্তির বলয় থেকে মুক্ত হয়ে হক প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞাকে সুদৃঢ় করার মাস।একটি মাস ধরে আমরা যারা নিজেদেরকে এভাবে প্রস্তুত করেছি, মাসটি অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে যদি তা ভুলে যাই এবং আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্য থেকে দুরে সরে যাই, তাহলে তা কুতটুকু সঙ্গত হবে? মূলত: যারা ভাবে যে, রমাদান মাসে ইবাদাত করাই যথেষ্ট, তাদের সে ভাবনা অসঙ্গত ও ভুল। এদিকে ইঙ্গিত করে এক মুসলিম মনিষী বলেছিলেন: ‘‘সে সকল ব্যক্তিবর্গ কতই না মন্দ, যারা রামাদান ছাড়া আল্লাহকে চেনে না।’’
তাছাড়া আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন: ‘‘মৃত্যু আসা পর্যন্ত তোমার রবের ইবাদাত করতে থাক’’। [সূরা আল-হিজর:৯৯]
উপরোক্ত আলেচনার আলোকে আমরা যদি আমাদের কর্তব্য কাজে তৎপর হতে পারি তাহলেই আমার বিশ্বাস আমাদের ঈদুল ফিতরের এ মহোৎসব অর্থবহ ও সার্থক হবে।

Sunday, April 28, 2019

রমজানে ২২ টি মারাত্মক ভুল আমরা করে থাকি.


        রহমান রহীম আল্লাহ্তায়ালার নামে
            প্রবন্ধটি পড়া হলেশেয়ার করতে ভুলবেন না
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj97O018t7InrlMWneebbTtaFcoVNQ8sKeNrT0NiEf5K1sdDC79l3t3I4ZfEtin5DxtvhiJxkWpjXAbPqUiENdRdoeSOH6mJKmcVsPCpCjVtG9UKwTlE-9ZCSAnRX79P7qcSYjpCHJ_u7E/s1600/ramadan_kareem_wallpaper.jpg
. রামাদানকে একটি প্রথাগত অনুষ্ঠান মনে করাঃ
আমাদের অনেকের কাছে রামাদান তাঁর আধ্যাত্মিকতা হারিয়ে ইবাদাতের বদলে একটি প্রথাগত অনুষ্ঠানের রূপ লাভ করেছে আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘zombie’ মত উপোস থাকি শুধুমাত্র আমাদের আশেপাশের সবাই রোজা রাখে বলে আমরা ভুলে যাই যে এই সময়টা আমাদের অন্তর আত্মাকে সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য…. আমরা দু করতে ভুলে যাই, ভুলে যাই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদেরকে মুক্তি দান করতে নিশ্চিতভাবে আমরা পানাহার থেকে বিরত থাকি কিন্তু সেটা কেবল লৌকিকভাবেই!যদিও আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃজিবরাঈল (আঃ) আমাকে বলেছেন, আল্লাহ্ ব্যক্তির নাক মাটিতে ঘষুন যার নিকট রামাদান আসল এবং তার গুনাহসমূহ মাফ হল না, এবং আমি বললাম, আমিন তারপর তিনি বললেন, আল্লাহ ব্যক্তির নাকও মাটিতে ঘষুন যে জীবদ্দশায় তার পিতামাতার একজনকে অথবা উভয়কে বৃদ্ধ হতে দেখল এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করার অধিকার রাখল না তাদের সেবা করার মাধ্যমে আর আমি বললাম, আমিন
অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহ্ ব্যক্তির নাক মাটিতে ঘষুন যার উপস্থিতিতে যখন আপনার নাম উচ্চারণ করা হয় তখন সে আপনার প্রতি সালাম বর্ষণ করে না আর আমি বললাম, আমিন”(তিরমিযী, আহমাদ, এবং অন্যান্য_আলবানী কর্তৃক সহীহকৃত)
. পানাহারের ব্যাপারে অতিমাত্রায় চাপে থাকাঃ
আমাদের অনেকের ক্ষেত্রে, রামাদান মাসের পুরোটাই খাবার ঘিরে আবর্তিত হয় সালাত, কুরআন তিলাওয়াত অন্যান্য ইবাদাতের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া বদলে আমরা পুরোটা দিন কেবল পরিকল্পনা প্রণয়ন, রান্নাবান্না, কেনাকাটা এবং খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চিন্তা করে কাটাই আমাদের চিন্তা ভাবনার পুরোটা জুড়েই থাকেখাওয়া-দাওয়া
যার দরূন আমরা উপোস থাকার মাসকে ভোজের মাসে পরিণত করেছি ইফতারের সময়ে আমাদের টেবিলের অবস্থা দেখার মত! পুঞ্জীভূত নানাপদী খাবার, মিষ্টান্ন এবং পানীয়ে পরিপূর্ণ পক্ষান্তরে, আমরা রামাদানের মুখ্য উদ্দেশ্য ভুলে যাচ্ছি, আর এভাবে আমাদের লোভ আর প্রবৃত্তির অনুসরণ বাড়তে থাকে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষালাভ করার বদলে এটাও একধরনের অপচয় এবং সীমালঙ্ঘন
“…..তোমরা খাও এবং পান করো, এবং কোনো অবস্থাতেই অপচয় করো না, আল্লাহ্ তাআলা কখনোই অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না ”(সূরা রাফঃ৩১)
. সারা দিন রান্না করে কাটানোঃ
কতিপয় বোন(হয় স্বেচ্ছায় নতুবা স্বামীর চাপে) সারা দিন সারা রাত ধরে রান্নাবান্না করতে থাকেন, তার ফলে দিনের শেষে তারা এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েন যে এশার সালাত পড়তে পারেন না, তাহাজ্জুদ কিংবা কুরআন তিলাওয়াত তো দূরে থাক! এই মাস হল মাগফিরাত এবং মুক্তিপ্রাপ্তির মাস সুতরাং, চলুন আমরা চুলা বন্ধ করে নিজেদের ঈমানের প্রতি মনযোগী হই
. মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়াঃ
আমাদের কিছুসংখ্যক সেহরীর সময়ে নিজেদেরকে বিস্ফোরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভরাক্রান্ত করে তুলি, কারণ আমরা মনে করি সারা দিন ক্ষুধার্ত অনুভব না করার এটাই একমাত্র পথ, আর কিছুসংখ্যক রয়েছেন যারা ইফতারের সময় এমনভাবে খান যাতে মনে হয় আগামীকাল বলে কিছুই নেই, সারাদিন না খাওয়ার অভাব একবারেই মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন যাহোক, এটা সম্পূর্ণরূপে সুন্নাহ্ বিরোধী কাজ
পরিমিতিবোধ সব কিছুর চাবিকাঠি রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃআদম সন্তান তার উদর ব্যতীত আর কোনো পাত্রই এত খারাপভাবে পূর্ণ করে না, আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ সোজা রাখার জন্য এক মুঠো খাবারই যথেষ্ট যদি তোমাদেরকে উদর পূর্ণ করতেই হয়, এক তৃতীয়াংশ খাবার দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানি দ্বারা আর অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ বায়ু দ্বারা পূর্ণ করো”(তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, আলবানী কর্তৃক সহীহকৃত)

অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ একজন মানুষকে আবশ্যকীয় অনেক আমল এবং ইবাদাত হতে দূরে সরিয়ে নেয়, তাকে অলস করে তোলে এবং অন্তরকে বধির করে ফেলে
ইমাম আহমদকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃউদরপূর্ণ অবস্থায় একজন মানুষ কি তার হৃদয়ে কোমলতা বিনয় অনুভব করে?” তিনি উত্তরে বলেছিলেনঃআমার মনে হয় না
. সারা দিন ঘুমিয়ে কাটানোঃ
রামাদান মাস হচ্ছে অত্যন্ত মূল্যবান সময়, এতটাই মূল্যবান যে মহান আল্লাহ্ পাক একেআইয়্যামুম মাদুদাত’(একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক দিবস) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আমাদের অনুধাবন করার পূর্বেই এই মাগফিরাত মুক্তির মাস শেষ হয়ে যাবে আমাদেরকে চেষ্টা করা উচিত এই পবিত্র মাসের প্রতিটি মূহুর্ত আল্লাহর ইবাদাতে কাটানোর, যাতে করে আমরা এই মাসের সর্বোচ্চ সওয়াব হাসিল করতে পারি যাহোক, আমাদের কিছুসংখ্যক রামাদানের দিনগুলি ভিডিও গেমস্ খেলে অতিবাহিত করে, অথবা জঘন্যতম হল টিভি দেখা, ছবি দেখা এমনকি গান শোনা পর্যন্ত সুবহানাল্লাহ্!!! আল্লাহকে মান্য করার চেষ্টা করা হয় তাঁকে অমান্য করার মাধ্যমে!
. রোজা রাখা অথচ খারাপ কাজ বর্জন না করাঃ
আমাদের কিছু সংখ্যক রোজা রাখে কিন্তু তারা মিথ্যাচার, অভিশাপপ্রদান, মারামারি, গীবত ইত্যাদি বর্জন করে না এবং কিছুসংখ্যক রোজা রাখার উদ্দেশ্য কেবলমাত্র পানাহার থেকে বিরত নয় বরং আল্লাহর প্রতি তাকওয়া(পরহেজগারী) অর্জন অনুধাবন না করে রোজা রাখে কিন্তু তারা প্রতারণা, চুরি, হারাম চুক্তি সম্পাদন, লটারির টিকেট ক্রয়, মদ বিক্রি, যিনা ইত্যাদিসহ যাবতীয় অননুমোদিত কর্মকান্ড বর্জন করে না
হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের ওপর সাওম ফরজ করা হয়েছে যেমনটি করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্বপুরূষদের ওপর যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো”(সূরা বাকারাঃ১৮৩)
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃযে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা এর ওপর আমল করা বর্জন করে না মূর্খতা পরিহার করে না, তার পানাহার হতে বিরত থেকে উপবাস করা আল্লাহর নিকট প্রয়োজন নেই”(বুখারী)
. ধূমপানঃ
ধূমপান ইসলামে বর্জনীয় সেটা রামাদান মাসেই হোক বা এর বাইরে হোক, কারণ এটাআল-খাবিছ্’(খারাপ কাজ) এর একটি এবং এটা যাবতীয় ধূমপানের সামগ্রী অন্তভূর্ক্ত করে যেমনঃ সিগার, সিগারেট, পাইপ, শিশা, হুক্কা ইত্যাদি
“……….তাদের জন্য যাবতীয় পাক জিনিসকে হালাল নাপাক জিনিসসমূহকে তাদের ওপর হারাম ঘোষণা করে………..”(সূরাআরাফঃ১৫৭)
এটা শুধু যে ধূমপায়ী তার জন্য ক্ষতিকর- তা নয়, বরং তার আশেপাশে যারা রয়েছে তাদের জন্যও ক্ষতিকর এটা কারো অর্থ অপচয়ের জন্য একটি মাধ্যমও বটে
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃকোনো ধরনের ক্ষতিসাধন করা যাবে না কিংবা ক্ষতিসাধন বিনিময়ও করা যাবে না
এই হাদীস বিশেষত রামাদানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং এটা সাওমকে বাতিল করে দেয়(ফতওয়া-ইবনে উছাইমিন)
. ইচ্ছাকৃতভাবে সেহরী বাদ দেওয়াঃ
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃসেহরী খাও, কারণ এটার মধ্যে বরকত রয়েছে”(বুখারী, মুসলিম)
এবং তিনি (সাঃ) বলেছেনঃআমাদের সাওম আর আহলে কিতাবদের সাওম পালনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে সেহরী গ্রহণ”(মুসলিম)
. ইমসাক এর সময় সেহরী খাওয়া বন্ধ করে দেওয়াঃ
কিছু লোক রয়েছে যারা ফজরের ওয়াক্তের ১০-১৫ মিনিট পূর্বে ইমসাক পালনের জন্য সেহরী খাওয়া বন্ধ করে দেয় শেখ ইবনে উছাইমিন বলেছেনঃএটা বিদআত ছাড়া আর কিছু নয় যার কোন ভিত্তি সুন্নাহে নেই বরং সুন্নাহ হল তার উল্টোটা করা আল্লাহ প্রত্যুষের আগ পর্যন্ত আমাদেরকে খেতে অনুমতি প্রদান করেছেনঃআর আহার কর পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়”(সূরা বাকারাঃ১৮৭)
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃতোমরা আহার কর পান কর যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতুম এর আযানের ধ্বনি শুনতে পাও, কারণ সে প্রত্যূষ না আসা পর্যন্ত আযান দেয় না
এই ইমসাক হচ্ছে কিছু সংখ্যক লোকের দ্বারা পালনকৃত আল্লাহর আদেশের অতিরিক্ত কাজ, তাই এটা ভুয়া এটা ধর্মের নামে এক ধরনের উগ্রপন্থী আচরণ আর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃযারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস হয়েছে, যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস হয়েছে, যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস হয়েছে”(মুসলিম)
১০. সেহরী না খাওয়ায় সাওম পালন না করাঃ
আমাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক রয়েছে যারা সাওম পালন করে না এই ভয়ে যে সেহরী খাওয়া হয় নিযাহোক, এটা এক ধরনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ভালোবাসা কাপুরূষতা আর এমন কি ব্যাপার যে সামান্য কয়েক মুঠো খাবার খাওয়া বাদ হয়ে যায়? এমন না যে এর কারণে আমরা মারা যাব আমাদের মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য সবকিছুকেই ছাপিয়ে যায়
১১. ইফতার এবং সেহরির নিয়ত করা
ইফতার এবং সেহরির সময় নিয়ত এর উদ্দ্যেশ্যে মুখ দিয়েদুআউচ্চারণ করা শরীয়ত সম্মত নয় ইফতার এবং সেহরির যে সকল দুআ আমাদের দেশে প্রতি বছর ইসলামিক ক্যালেন্ডারগুলিতে প্রকাশিত হয় সেগুলো বিদআত ইফতার অথবা সেহরির জন্য নির্দিষ্ট কোন দুআ সহিহ হাদিস নেই এক্ষেত্রে শুধু মনে মনে নিয়ত করলেই ইনশাআল্লাহ হবে
১২. রোযা ভাঙতে দেরি করাঃ
আমাদের অনেকেই ইফতারের সময় মাগরিবের আযান শেষ হওয়া পর্যন্ত বসে থাকেন, আযান শেষ হলে রোযা ভাঙেন সূর্য অস্ত যাবার পর আযান দেওয়ার সাথে সাথে রোযা ভাঙা সুন্নাহ সম্মত আনাস(রাঃ) বলেন,“রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটাই করতেন(মুসলিম)
১৩. ইফতার বেশি খেতে গিয়ে মাগরিবের নামায জামাআত ধরতে না পারাঃ
আমরা অনেকেই ইফতারিতে এত বেশি খাবার নিয়ে বসি যে সেগুলো শেষ করতে গিয়ে মাগরিবের জামাআত ধরতে পারিনা এটা একেবারেই অনুচিত রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েক টুকরা খেজুর মুখে দিয়ে ইফতার ভেঙে অতঃপর মাগরিবের নামাজ এর জন্য চলে যেতেন নামাজ শেষ করে এসে আমরা ফিরে এসে ইচ্ছা করলে আরও কিছু খেতে পারি
১৪. আমাদের দুআ কবুল হওয়ার সুযোগ ছেড়ে দেওয়াঃ
সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির দুআ রোযা ভাঙার সময় আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে থাকে রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন,“তিন ধরনের ব্যক্তির দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয়না- )একজন পিতার দুয়া, )রোযাদার ব্যক্তির দুয়া, )মুসাফিরের নামাজ(বায়হাকি)
আমরা এই সময়ে দুআ না করে বরং খাবার পরিবেশন,কথাবার্তা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকি আমাদের চিন্তা করা উচিৎ কোনটা আমাদের দরকার- খাবার নাকি দুআ কবুল হওয়া ?
১৫. রোযা রাখা অথচ নামাজ না পরাঃ
সিয়াম পালনকারী কোন ব্যক্তি নামাজ না পরলে তার সিয়াম কবুল হয়না রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন,“সালাত(নামাজ) হচ্ছে ঈমান এবং কুফর এর পার্থক্যকারী(মুসলিম)
আসলে শুধু সিয়াম নয়,সালাত(নামাজ) না পরলে কোন ইবাদতই কবুল হয়না
রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন,“যে আসরের সালাত পরেনা, তার ভাল কাজসমূহ বাতিল হয়ে যায়”(বুখারি)
১৬. রোযা রাখা অথচ হিজাব না পরা
মুসলিম নারীদের জন্য হিজাব না পরা কবীরা গুনাহ
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও”(আন-নুরঃ ৩১)
হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয় এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু”(আল-আহযাবঃ ৫৯)
সুতরাং রোযা রাখা অথচ হিজাব না পরা অবশ্যই সিয়াম পালনের পুরস্কার হতে দূরে সরিয়ে দেয় যদিও এটি সিয়াম ভঙ্গ করেনা
১৭. পরীক্ষা কিংবা কর্মব্যস্ততার জন্য রোযা না রাখা
পরীক্ষা কিংবা কর্মব্যস্ততার কারণে রোযা না রাখা শরীয়ত সম্মত নয় সকালে পড়ালেখা করতে কষ্ট হলে রাতে করার সময় থাকে আমাদের মনে রাখা উচিৎ যে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার চেয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করাটাই আমাদের মূল লক্ষ্যপড়ালেখা করার মধ্যে দিয়েও যদি আমরা সঠিকভাবে যদি আমরা রোযা রাখার মত ফরয কাজগুলো করার চেষ্টা করি, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদের জন্য তা সহজ করে দিবেন এবং আমাদের সাহায্য করবেন
“……আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেনএবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন”(আত-তালাকঃ -)
১৮. স্বাস্থ্য কমানোর উদ্দ্যেশ্যে রোযা রাখা
স্বাস্থ্য কমানোর জন্য রোযা রাখা উচিত নয় এটি অন্যতম একটি বড় ভুল যা আমরা করে থাকি সিয়াম পালন করার একমাত্র উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন যদি স্বাস্থ্য কমানোর উদ্দ্যেশ্যে কেউ রোযা রাখে তাহলে তা শিরকের(ছোট শিরক বা শিরকুল আসগার) আকার ধারন করতে পারে
১৯. তারাবীর নামাযের রাকাআত সংখ্যা নিয়ে মতবিরোধঃ
তারাবীর নামাযের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাআত নেই আট এবং বিশ রাকাআত- দুটোই শরীয়ত সম্মত শেখ ইবনে উথাইমিন বলেন,“এগারো কিংবা তেইশ রাকাআতের কোনটিকে নির্দিষ্ট করে অপরটি বাতিল করা অনুচিতকারন বিষয়টি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ,সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর
২০. নির্দিষ্টভাবে শুধু ২৭ রমযানের রাতকে লাইলাতুল ক্বাদর মনে করে ইবাদত করাঃ
আমরা অনেকেই কেবল ২৭ রমযান রাতে লাইলাতুল ক্বাদর পাওয়ার জন্য ইবাদত করে থাকি,কিন্তু অন্যান্য বিজোড় রাতগুলিকে প্রাধান্য দেইনা অথচ রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন,“রমযানের শেষ দশ রাত্রির বিজোড় রাতগুলিতে লাইলাতুল ক্বাদর তালাশ কর”(বুখারি মুসলিম)
২১. ঈদের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে রমযানের শেষাংশ অবহেলায় পালন করা
আমরা অনেকেই ঈদের প্রস্তুতি(নতুন কাপড় কেনা,খাবারের আয়োজন করা,মার্কেটে ঘোরাঘুরি করা)নিতে গিয়ে রমযানের শেষ দশ দিন অবহেলায় পালন করি(ঠিকমত ঈবাদত না করা এবং লাইলাতুল ক্বাদরের তালাশ না করা) রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)রমযানের শেষ দশ দিন আল্লাহর ইবাদতে খুব বেশি সময় নিমগ্ন থাকতেন,কেনাকাটি করায় ব্যস্ত থাকতেন না রমযান শুরু হবার আগেই আমাদের কেনাকাটি শেষ করা উচিৎ
আয়শা (রাঃ)হতে বর্ণিত,“যখন রমযানের শেষ দশক শুরু হত রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)লুঙ্গি শক্ত করে বাঁধতেন(অর্থাৎ ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন,স্ত্রীদের সাথে অন্তরঙ্গ হওয়া থেকে বিরত থাকতেন),রাত্রি জাগরণ করতেন এবং তাঁর পরিবারকে জাগিয়ে তুলতেন”(বুখারী,মুসলিম)
২২. ইফতার পার্টির আয়োজন করা
যদিও অপরকে ইফতারি করানোতে সওয়াব আছে এবং কাজে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে, তথাপি আমাদের অনেকেই মুখরোচক ইফতার পার্টির আয়োজন করে থাকেন,যেখানে হিজাববিহীন নারীদের আগমন থেকে শুরু করে অশ্লীল নাচ-গান, নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা,তারাবিহ এর নামাজ ছেঁড়ে দেওয়া- সবই হয়ে থাকে যেগুলো সম্পূর্ণভাবে ইসলামে নিষিদ্ধ

সুরা: ইয়াসিন আরবি & বাংলা উচ্চারণ

সুরা: ইয়াসিন بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ আরবি & বাংলা উচ্চারণ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল...