Saturday, September 17, 2016

১. প্রশ্নঃ আমাদের প্রিয় নবীজীর নাম কি?
উত্তরঃ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
২. প্রশ্নঃ তাঁর পিতা- মাতা ও দাদার নাম কি?
উত্তরঃ পিতাঃ আবদুল্লাহ, মাতাঃ আমেনা, দাদাঃ আবদুল মুত্তালিব।
৩. প্রশ্নঃ তাঁর দুধমাতার নাম কি?
উত্তরঃ প্রথম দুধমাতা ছুওয়াইবা (আবু লাহাবের কৃতদাসী) তারপর হালিমা সাদিয়া (রাঃ)।
৪. প্রশ্নঃ আমাদের প্রিয় নবীজীর নাম কয়টি ও কি কি?
উত্তরঃ পাঁচটি। মুহাম্মাদ, আহমাদ, মাহী, হাশের, আক্বেব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। (বুখারী)
৫. প্রশ্নঃ তিনি কখন জন্মলাভ করেন?
উত্তরঃ ৯ই রবিউল আওয়াল। মতান্তরে ১২ই রবিউল আওয়াল সোমবার দিন। ৫৭০ মতান্তরে ৫৭১খৃঃ। হস্তি বছর।
৬. প্রশ্নঃ জন্মলাভের পর কে তাঁর লালন-পালনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন?
উত্তরঃ দাদা আবদুল মুত্তালিব।
৭. প্রশ্নঃ কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নাম মুহাম্মাদ রাখেন?
উত্তরঃ দাদা আবদুল মুত্তালিব।
৮. প্রশ্নঃ নবীজীর কত বছর বয়সে তাঁর পিতা-মাতা ইন্তেকাল করেন?
উত্তরঃ তাঁর জন্মের পূর্বে পিতা এবং তাঁর বয়স ৬ বছর হলে মাতা ইন্তেকাল করেন।
৯. প্রশ্নঃ নবীজীর কত বছর বয়সে তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালেব ইন্তেকাল করেন?
উত্তরঃ তখন তাঁর বয়স ৮ বছর।
১০. প্রশ্নঃ দাদা আবদুল মুত্তালেব ইন্তেকাল করার পর কে তাঁর লালন-পালনের দায়িত্ব নেন?
উত্তরঃ চাচা আবু তালেব।
১১. প্রশ্নঃ নবীজী কত বছর বয়সে চাচা আবু তালেবের সাথে শাম দেশ (সিরিয়া) সফর করেন?
উত্তরঃ ১২ বছর বয়সে।
১২. প্রশ্নঃ কৈশরে নবীজী কি কাজ করতেন?
উত্তরঃ অল্প বেতনে মক্কাবাসীদের ছাগল চরানোর কাজ করতেন।
১৩. প্রশ্নঃ কৈশরে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিতৃব্যদের সাথে একটি যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধটির নাম কি?
উত্তরঃ হারবুল ফুজ্জার।
১৪. প্রশ্নঃ হিলফুল ফযূল কি?
উত্তরঃ মক্কার সম্মানিত লোকেরা অত্যাচারিতের সাহায্য করার জন্য একটি চুক্তি সম্পাদন করে তাকে হিলফুল ফযূল বলা হয়। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিতৃব্যদের সাথে এই চুক্তিতে অংশ গ্রহণ করেন।
১৫. প্রশ্নঃ নবূওতের পূর্বে নবীজীর একটি বিচক্ষণতা পূর্ণ ফায়সালার বিবরণ দাও?
উত্তরঃ তাঁর বয়স ৩৫ বছর। সে সময় কাবা সংস্করণ করা হয়। শেষে কে হজরে আসওয়াদ স্থাপন করে সম্মানিত হবে এনিয়ে মক্কার লোকেরা বিবাদে লিপ্ত হলে নবীজী তাদের মাঝে মিমাংসা করে দেন। একটি চাদরে পাথরটি রেখে সকল গোত্রের প্রধানদের তার কিনারা ধরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং তিনি নিজ হাতে পাথরটি স্থাপন করেন। এতে সবাই খুশি হয়।
১৬. প্রশ্নঃ যুবক বয়সে নবীজী কি কাজ করতেন?
উত্তরঃ ব্যবসা।
১৭. প্রশ্নঃ তিনি কখন কার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন?
উত্তরঃ তাঁর বয়স যখন ২৫ বছর তখন খাদিজা (রাঃ) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সে সময় খাদিজার বয়স ছিল ৪০।
১৮. প্রশ্নঃ তাঁর কতজন স্ত্রী ছিলেন? তাঁদের নাম কি?
উত্তরঃ ১১ জন। তাঁরা হচ্ছেনঃ
  • ১- খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ
  • ২- সাওদা বিনতে যামআ
  • ৩- আয়েশা বিনতে আবু বকর
  • ৪- যায়নাব বিনতে খুযায়মা (উম্মুল মাসাকীন)
  • ৫- হাফছা বিনতে ওমর বিন খাত্তাব
  • ৬- যায়নাব বিনতে জাহাশ
  • ৭- উম্মু সালামা হিন্দ বিনতে আবী উমাইয়া
  • ৮- জুআইরিয়া বিনতে হারেছ
  • ৯- ছাফিয়া বিনতে হুওয়াই বিন আখতাব
  • ১০- মায়মূনা বিনতে হারেছ
  • ১১- উম্মে হাবীবা রামলা বিনতে আবী সুফিয়ান। (রাঃ)
১৯. প্রশ্নঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ স্ত্রীর নাম কি?
উত্তরঃ সর্ব প্রথম স্ত্রী ছিলেন, খাদিজা (রাঃ) এবং সর্বশেষে যাকে বিবাহ করেছিলেন তিনি ছিলেন, মায়মূনা বিনতে হারেছ (রাঃ)।
২০. প্রশ্নঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর একমাত্র কুমারী স্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তরঃ আয়েশা (রাঃ)
২১. প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এর কতজন সন্তান ছিলেন?
উত্তরঃ ৭ জন। কাসেম, আবদুল্লাহ, যায়নাব, উম্মু কুলছুম, রুকাইয়া, ফাতেমা ও ইবরাহীম (রাঃ)।
২২. প্রশ্নঃ নবীজীর নাতী-নাতনীর সংখ্যা কত ছিল?
উত্তরঃ ৭ জন। যায়নাবের সন্তান দুজনঃ আলী ও উমামা। রুকাইয়্যার সন্তান একজনঃ আবদুল্লাহ (শিশুবস্থায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন) ফাতিমার সন্তান চার জনঃ হাসান, হুসাইন, উম্মে কুলছুম, যায়নাব।
২৩. প্রশ্নঃ কতবার এবং কখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বক্ষ বিদীর্ণ করা হয়?
উত্তরঃ দুবার। একবার শিশুকালে চার বছর বয়সে এবং দ্বিতীয়বার মেরাজে যাওয়ার সময়।
২৪. প্রশ্নঃ নবুওতের পূর্বে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে ইবাদত করতেন?
উত্তরঃ ইবরাহীম (আঃ) এর দ্বীন অনুসারে ইবাদত করতেন।
২৫. প্রশ্নঃ কোন পাহাড়ের কোন গুহায় নবীজী ধ্যানমগ্ন থাকতেন?
উত্তরঃ নূর পাহাড়ের হেরা গুহায়।
২৬. প্রশ্নঃ কত বছর বয়সে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উপর ওহী নাযিল হয়?
উত্তরঃ ৪০ বছর ৬ মাস ১২ দিন।
২৭. প্রশ্নঃ কখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উপর ওহী নাযিল হয়?
উত্তরঃ ২১ রামাযানের রাতে সোমবার। ১০ আগস্ট ৬১০ খৃষ্টাব্দ।
২৮. প্রশ্নঃ গারে হেরা থেকে ফিরে এলে স্ত্রী খাদিজা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নিয়ে কার কাছে গমণ করেন এবং তিনি কি বলেন?
উত্তরঃ ওরাকা বিন নওফলের নিকট। তিনি বলেন, ইনি এ উম্মতের নবী।
২৯. প্রশ্নঃ নবুওত লাভের পর নবীজী কিভাবে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন?
উত্তরঃ গোপনে।
৩০. প্রশ্নঃ সাহাবীদের সাথে গোপনে কোথায় মিলিত হতেন?
উত্তরঃ আরকাম বিন আবুল আরকামের গৃহে।
৩১. প্রশ্নঃ গোপন দাওয়াতের সময় কাল কত বছর ছিল?
উত্তরঃ ৩ বছর।
৩২. প্রশ্নঃ মক্কী জীবনের দাওয়াতী কাজ কয়টি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল? প্রত্যেক পর্যায়ের সময়কাল কত ছিল?
উত্তরঃ ৩টি পর্যায়ে।
ক) গোপন দাওয়াত প্রথম তিন বছর।
খ) মক্কাবাসীদের মাঝে প্রকাশ্যে দাওয়াত। নবুওতের ৪র্থ বছর থেকে ১০ম বছর পর্যন্ত।
গ) মক্কার বাইরে দাওয়াত। নবুওতের ১০ম বছরের শেষ সময় থেকে হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত।
৩৩. প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম কারা ইসলাম গ্রহণ করেন?
  • উত্তরঃ নারীদের মধ্যে খাদীজা (রাঃ)
  • পুরুষদের মধ্যে আবু বকর (রাঃ)
  • বালকদের মধ্যে আলী (রাঃ)
  • ক্রীতদাসদের মধ্যে যায়দ বিন হারেছা (রাঃ)
৩৪. প্রশ্নঃ কাফের হওয়া সত্বেও দাওয়াতী কাজে কে নবীজীকে সহযোগিতা করেন?
উত্তরঃ চাচা আবু তালেব।
৩৫. প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম মুসলমানগণ কোথায় হিজরত করেন এবং কখন?
উত্তরঃ নবুওতের ৫ম বর্ষে সর্বপ্রথম মুসলমানগণ হাবশায় (বর্তমানে আফ্রিকার ইথিউপিয়া নামক দেশ) হিজরত করেন।
৩৬. প্রশ্নঃ আবিসিনয়া বা হাবশার দ্বিতীয় হিজরতে কতজন পুরুষ ও কতজন নারী ছিলেন?
উত্তরঃ ৮৩ জন পুরুষ ও ১৯ জন নারী ছিলেন।
৩৭. প্রশ্নঃ কেন সেই দেশে হিজরত করার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদেরকে পরামর্শ দেন?
উত্তরঃ কেননা সেখানকার বাদশা নাজ্জাশী ন্যায় পরায়ন ও দয়ালু লোক ছিলেন।
৩৮. প্রশ্নঃ কোথায় কতদিন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বয়কট করে রাখা হয়েছিল?
উত্তরঃ নবুওতের ৭ম থেকে ১০ম বছর পর্যন্ত ৩ বছর শেবে আবী তালেবে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বয়কট করে রাখা হয়েছিল।
৩৯. প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নবুওতী জীবনের কোন সময়কে আমুল হুযন বা দুশ্চিন্তার বছর বলা হয়?
উত্তরঃ ১০ম বছরকে। সে বছর তাঁর জীবন সঙ্গীনী খাদিজা (রাঃ) ও তাঁকে সহযোগিতাকারী আবু তালেব মৃত্যু বরণ করেন। আর তখন থেকেই নেমে আসে তাঁর প্রতি অবর্ণনীয় নির্যাতন।
৪০. প্রশ্নঃ কোন কোন কাফের রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সবচেয়ে বেশী কষ্ট দিয়েছিল?
উত্তরঃ আবু লাহাব, আবু জাহেল, উক্ববা বিন আবী মুআইত্ব, ওতবা, শায়বা, উমাইয়া বিন খালাফ।
৪১. প্রশ্নঃ একজন কাফের রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে খুবই কষ্ট দিত। তার ধ্বংসের জন্য তার নামে কুরআনে একটি সূরা নাযিল হয়। ঐ কাফেরের নাম কি এবং সূরাটির নাম কি?
উত্তরঃ কাফেরের নামঃ আবু লাহাব। সূরাটির নামঃ সূরা লাহাব।
৪২. প্রশ্নঃ নবীজী কখন মেরাজে গমণ করেন ?
উত্তরঃ নবুওতের ১০ম বছরে।
৪৩. প্রশ্নঃ আক্বাবার প্রথম বায়আত কখন অনুতি হয়?
উত্তরঃ নবুওতের ১১তম বছরে।
৪৪. প্রশ্নঃ আক্বাবার প্রথম বায়আতে কোন্‌ গোত্র থেকে কতজন লোক অংশ নিয়েছিলেন?
উত্তরঃ মদীনার আওস ও খাজরায গোত্রের ১২ জন লোক।
৪৫. প্রশ্নঃ আক্বাবার দ্বিতীয় বায়আত কখন অনুতি হয়?
উত্তরঃ নবুওতের ১২তম বছরে মিনায় আক্বাবার দ্বিতীয় বায়আত অনুতি হয়।
৪৬. প্রশ্নঃ এই বায়আতে কতজন লোক অংশ নিয়েছিলেন?
উত্তরঃ মদীনার আওস ও খাজরায গোত্রের ৭৩ জন পুরুষ ও ২ জন নারী এতে অংশ নিয়েছিলেন।
৪৭. প্রশ্নঃ নবীজী নবুওতের কত বছর মক্কায় অতিবাহিত করেন?
উত্তরঃ ১৩ বছর।
৪৮. প্রশ্নঃ নবীজী কত বছর মদীনায় কাটান?
উত্তরঃ ১০ বছর।
৪৯. প্রশ্নঃ কখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে হিজরতের আদেশ করা হয়?
উত্তরঃ মক্কার কুরায়শগণ দারুন্নদওয়ায় বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে তারা একযোগে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে হত্যা করবে। তখন আল্লাহ তাকে মক্কা পরিত্যাগ করার নির্দেশ প্রদান করেন।
৫০. প্রশ্নঃ নবীজী কখন মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করেন?
উত্তরঃ ছফর মাস ১ম হিঃ। ৬২২ খৃষ্টাব্দ।
৫১. প্রশ্নঃ হিজরতের পূর্বে নবীজী কাকে তাঁর বিছানায় শায়িত রেখে গিয়েছিলেন?
উত্তরঃ আলী (রাঃ)কে।
৫২. প্রশ্নঃ নবীজীর হিজরতের সময় সফর সঙ্গী কে ছিলেন?
উত্তরঃ আবু বকর (রাঃ)।
৫৩. প্রশ্নঃ হিজরতের সময় তিনি কোন গুহায় কত দিন আত্মগোপন করেন?
উত্তরঃ গারে ছাওরে। তিন দিন।
৫৪. প্রশ্নঃ হিজরতের সময় নবীজী রাস্তা দেখানোর জন্য একজন কাফেরকে পথপ্রদর্শক হিসেবে ভাড়া করে ছিলেন। তার নাম কি?
উত্তরঃ আবদুল্লাহ বিন উরাইকাত।
৫৫. প্রশ্নঃ নবীজীকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য কাফেরগণ কি পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিল?
উত্তরঃ ১০০ উট।
৫৬. প্রশ্নঃ নবীজীর উটনীর নাম কি ছিল?
উত্তরঃ কাছওয়া।
৫৭. প্রশ্নঃ নবীজী কখন মদীনায় পৌঁছেন?
উত্তরঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবু বকর (রাঃ) সোমবার দিন ৮ রবিউল আওয়াল প্রথম মদীনার কুবায় পৌঁছেন।
৫৮. প্রশ্নঃ নবীজি কখন মদীনায় প্রবেশ করেন?
উত্তরঃ ১২ই রবিউল আওয়াল। শুক্রবার দিন।
৫৯. প্রশ্নঃ নবীজী মদীনায় গিয়ে কার বাড়িতে অবস্থান করেন?
উত্তরঃ আবু আইয়্যুব আনছারীর (রাঃ) বাড়িতে।
৬০. প্রশ্নঃ নবীজী সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মাণ করেন?
উত্তরঃ মসজিদে কূবা।
৬১. প্রশ্নঃ মদীনায় গিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্থানীয় ইহুদীদের সাথে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন। ইসলামের ইতিহাসে এটাকে কি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে?
উত্তরঃ মদীনার সনদ।
৬২. প্রশ্নঃ নবীজী কতবার ওমরা করেন?
উত্তরঃ চার বার।
৬৩. প্রশ্নঃ নবীজী কতবার হজ্জ করেন?
উত্তরঃ একবার। বিদায় হজ্জ ১০ম হিজরী।
৬৪. প্রশ্নঃ বিদায় হজ্জে কতজন লোক নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে হজ্জ করেছেন?
উত্তরঃ ১ লক্ষ লোক। অন্য বর্ণনায় ১ লক্ষ ৪৪ হাজার।
৬৫. প্রশ্নঃ নবীজী কতটি রামাযান রোযা রাখেন?
উত্তরঃ নয়টি রামাযান।
৬৬. প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখন মৃত্যু বরণ করেন?
উত্তরঃ ১২ই রবিউল আওয়াল। সোমবার। ১১ হিজরী।
৬৭. প্রশ্নঃ মৃত্যুর সময় নবীজীর বয়স কত ছিল?
উত্তরঃ ৬৩ বছর।
৬৮. প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে কোথায় দাফন করা হয়েছে?
উত্তরঃ তাঁর নিজ গৃহে তথা আয়েশা (রাঃ)এর গৃহে।
৬৯. প্রশ্নঃ নবীজীর নামাযে জানাযা কে পড়িয়েছে?
উত্তরঃ নির্দিষ্টভাবে কোন ইমাম ছিল না। এককভাবে লোকেরা আয়েশা (রাঃ)এর গৃহে প্রবেশ করেন এবং জানাযা পড়েন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সংক্ষপ্তি জীবনী



                                                               বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ। আসসালামু আলাইকুম। প্রথমে আমি মহান আল্লাহ তা-আলার কাছে সুক্রিয়া জ্ঞাপন করছি।এটি হচ্ছে আমার জীবনের প্রথম ব্লগ সাইট। যেহেতু এটিই আমার জীবনের প্রথম ব্লগ সাইট সেহেতু আমি এই ব্লগে প্রথমেই কিছু ইসলামিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। আমি চাই এই ব্লগে আপনারা আপনার নিজের মতামত তুলে ধরুন এবং আপনার বন্ধুদেরকেউ এখানে আমন্ত্রন জানান। তো যাই হোক আজ আমি আমার প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত্র তুলো ধরছি।
1.    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বংশ পরিচয় :
তিনি মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ইবনে হাশেম। হাশেমের দিকে সম্পর্কযুক্ত করে নবীজীরবংশ হাশেমী বংশ হিসেবে পরিচিত। আর হাশেম ছিলেন কুরাইশ গোত্রের যা আদনান পর্যন্ত পৌঁছেছে।
2.    জন্ম  শৈশব :
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হস্তীবাহিনী ধ্বংসের বছর জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পূর্বেই তার পিতা ইন্তেকাল করেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনী সা গোত্রে লালিতপালিত হন এবং চারঅথবা পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানেই বসবাস করেন। আর সেখানেই তাঁর বক্ষ বিদীর্ণের ঘটনা ঘটে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা  দুধ মাতা গণ :
•    স্বীয় মাতা আমেনা বিনতে ওয়াহাব      
•    হালমিহ সাদিয়াহ  
•    আবূ লাহাবের বাঁদী সুয়াইহাব 
3.    মায়ের মৃত্যু :
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা আমেনা মদিনা মুনাওয়ারায় নিজ স্বামী আব্দুল্লাহ এর কবরযিয়ারতের পর ফেরার পথে মক্কা  মদিনার মাঝে অবসি' আবহাওয়া নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন। তখননবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর।
4.    দাদা  চাচার তত্ত্বাবধানে :
মাতাপিতার মৃত্যুর পর দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর লালন পালনের দায়িত্ব ভর গ্রহণ করেন। তিনি তাকে খুবস্নেহ করতেন। এমনকি নিজের ছেলেদের উপরও তাঁকে প্রাধান্য দিতেন। নিজের আসনে বসাতেন। দাদার মৃত্যুরপূর্ব পর্যন্ত তিনি তাঁর তত্ত্বাবধানেই ছিলেন।
দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর চাচা আবু তালিব তাঁর দায়িত্ব নেন। তখন তার বয়স ছিল আট বছর। তিনিস্বীয় চাচাকে বকরী লালনপালন  শাম দেশের ব্যবসায়ে সহযোগিতা করতেন।
5.    খাদীজা রাএর সাথে বিবাহ এবং সন্তানাদি :
পঁচিশ বছর বয়সে খাদীজা রাকে বিবাহ করেন। একমাত্র ইবরাহীম ব্যতীত তাঁর সব কয়টি সন্তান খাদীজারথেকেই হয়েছে।
কাসেম তাঁর প্রথম সন্তান। এর নামেই তাঁর উপনাম আবুল কাসেম। অতঃপর যয়নবরুকাইয়াউম্মে কুলসুম,ফাতেমা  আব্দুল্লাহ এর জন্ম হয়।
তাঁর ছেলের সকলেই বাল্য বয়সে মারা যান। মেয়েদের সকলেই ইসলাম গ্রহণ করে হিযরত করার সুযোগ পান।ফাতেমা রাব্যতীত তাদের সকলেই নবীজীর জীবদ্দশায় মারা যান। তিনি নবীজীর ইন্তেকালের ছয় মাস পরমৃত্যু বরণ করেন।
6.    নবুওয়্যাত পূর্ব গুণাবলি :
তিনি ছিলেন চিন্তায় সঠিকসিদ্ধান্তে নির্ভুলব্যক্তিত্বে অনন্যচরিত্রে শ্রেষ্ঠতরপ্রতিবেশী হিসেবে অতি মর্যাদাবান,সহনশীলতায় সুমহানসত্যবাদিতায় মহত্ত্বর। সচ্চরিত্রবদান্যতাপুণ্যকর্মাপ্রতিশ্রুতি রক্ষা  বিশ্বস-তায়অনুপম আদর্শ। এসব গুণে মুগ্ধ হয়ে স্বীয় জাতি তাঁকে আল-আমীন উপাধিতে ভূষিত করে।
7.    ওহী নাযিলের সূচনা :
তিনি মক্কায় অবস্থিত হেরা  গুহায় ইবাদত করতেন। চল্লিশ বছর বয়সে তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হন।
জিবরাইল আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ওহী নিয়ে অবতরণ করেন।
أول ما نزل عليه قوله تعالى : اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ ﴿﴾ خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ ﴿﴾ اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ ﴿﴾ الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ ﴿﴾ عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ ﴿﴾ (سورة العلق )
সর্ব প্রথম সূরা ‘আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাযিল হয় : যার অর্থপাঠ করুনআপনার পালন কর্তার নামে,যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুনআপনার পালনকৃত মহা দয়ালু।যিনি কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। (সূরা আলাক:-)
8.    দাওয়াতের আদেশঃ 
أمر الله تعالى خاتم رسله وأنبيائه صلى الله عليه وسلم أن يدعو الناس إلى الإســلام، قال تعالي : يَاأَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ ﴿﴾ قُمْ فَأَنْذِرْ ﴿﴾ وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ ﴿﴾  . (سورة المدثر)
আল্লাহ তাআলা সর্বশেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মানুষের মাঝে ইসলাম প্রচারের আদেশ করেন। মর্মে তিনি ইরশাদ করেনহে চাদরাবৃত ব্যক্তিওঠ এবং সতর্ক কর।
9.    গোপনে দাওয়াত :
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ যথাযথ পালন করেন এবং গোপনে গোপনেমানুষের মাঝে ইসলাম প্রচার করতে শুরু করেন। যাতে করে কুরাইশদের বিরোধিতা প্রকট না হয়। তিনিসর্বপ্রথম আপন পরিবারপরিজন  বন্ধু-বর্গকে ইসলামের দাওয়াত দেন। সর্বপ্রথম খাদীজা রাতাঁর দাওয়াতগ্রহণ করেন। পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম আবূ বকর সিদ্দীক রাছোটদের মধ্যে আলী ইবনে আবূ তালিব রাএবংক্রীতদাসদের মধ্যে যায়েদ ইবনে হারেসা রাইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি খাদিজা রাএর ক্রীতদাস ছিলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন বছর পর্যন্ত তার নিকটস্থলোকদের মাঝে ইসলাম প্রচারে গোপনীয়তাঅবলম্বন করেন। তিনি দারুল আরকাম তথা কুরাইশ নেতা আরকাম ইবনে আবূ আরকামের বাড়িটিমুসলমানদের সম্মেলনস' হিসেবে নির্বাচিত করেন।
10.    প্রকাশ্যে দাওয়াত :
ثم أمر الله تعالى : النبي صلى اللع عليه وسلم بإعلان الدعوة على الناس قال تعالى : فاصدع بما تؤمر وأعرض عن المشركين. (سورة الحجر)
অতঃপর আল্লাহ তাআলা প্রকাশ্যে দ্বীন প্রচারের আদেশ করলেনইরশাদ হচ্ছেঅতএব আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়েদিন যা আপনাকে আদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের পরওয়া করবেন না।” (সূরা হিজর : ৯৪)
وأنذر عشيرتك الأقربين. (الشعراء:২১৪)
আপনি নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।” (সূরা শুআরা : ২১৪)
امتثل النبي صلى الله عليه وسلم لأمر الله، ودعا عشيرته والمقربين له إلى اجتماع عند جبل الصفا. ثم أخبرهم بأنه قد جمعهم ليبلغهم رسالة ربه، بترك عبادة الأصنام وأن يعبدوا الله وحده. فقام من بين الحاضرين عمه أبو لهب غاضبا وقال له : تبالك ؟ لهذا جمعتنا؟ فأنزل الله سبحانه فيه وفي زوجته أم جميل: تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ ﴿﴾ مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ ﴿﴾ سَيَصْلَى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ ﴿﴾ وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ ﴿﴾ فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِنْ مَسَدٍ ﴿﴾  (سورة المسد)
আল্লাহ তাআলার আদেশ পেয়ে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিকটতম আত্মীয়-স্বজনদেরকে সাফা পাহাড়ের পাদদেশে একত্রিত করেন। অতঃপর তাদেরকে মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করে একআল্লাহর ‘ইবাদত করতে আহ্বান করেন। সমবেত লোকদের মধ্য থেকে তাঁর চাচা আবূ লাহাব বলে উঠল:তোমার ধ্বংস হোক জন্যেই কি আমাদেরকে একত্রিত করেছেএর প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা আবূ লাহাব তার স্ত্রী উম্মে জামীল সম্পর্কে সূরা মাসাদ (লাহাবঅবতীর্ণ করেন : “আবূ রাহাবের দুহাত ধ্বংস হোক এবংধ্বংস হোক সে নিজে। কোন কাজে আসেনি তার ধন-সম্পদ  যা সে উপার্জন করেছে। সত্বরই সে প্রবেশ করবেলেলিহান অগ্নিতে এবং তার স্ত্রীওযে ইন্ধন বহন করেতার গলদেশে খর্জুরের রশি নিয়ে।” (সূরা মাসাদ : -)
11.    ঠাট্টা-বিদ্রূপ :
মুশরিকরা নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বিভিন্ন উপায়ে উপহাস করত। কখনো কখনোতাকে পাগল  যাদুকর বলত। আবার কখনো বলত কবি  গণক। অগান' লোকদেরকে তাঁর সাথে সাক্ষাৎকরতে অথবা কথা শুনতে বাধা দিত। তাঁর চলাচলের রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে রাখত এবং সালাতরত অবস'ায়তাঁর উপর ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ করত
12.    নির্যাতন নিপীড়ন :
মুশরিকরা তাদের মুসলিম গোলামদের উপর কঠিন নির্যাতন চালাতো। তাদেরকে হাতপা বেঁধে ভর দুপুরেউত্তপ্ত বালুকারাশিতে শুইয়ে দিত এবং ভারী পাথর দ্বারা তাদের বুক চাপা দিত এবং ছড়ি দ্বারা প্রহার করত অগ্নি সেঁকা দিত। নির্যাতনের এমন কোন পদ্ধতি নেই যা তারা মুসলমানদের উপর প্রয়োগ করেনি।
13.    ধৈর্য  অবিচল :
মুসলমানগণ মুশরিকদের সকল নির্যাতন  নিপীড়ন ধৈর্য  দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা করতেন। কেননা নবীকরীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে সাওয়াব  জান্নাত লাভের আশায় বিপদে ধৈর্য ধারণ  অনড়থাকার পরামর্শ দেন। মুশরিকদের নির্যাতন ভোগ করেছেন এমন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সাহাবী হলেন : বিলালইবনে রাবাহ  আম্মার ইবনে ইয়াসির প্রমুখ রা. তাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ইয়াসির সুমাইয়া রাইসলামের ইতিহাসে এরাই সর্বপ্রথম শহীদ।

14.    হাবশায় (আবিসিনিয়ায়হিজরত .
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের অনবরত নির্যাতনের কারণে সাহাবাগণের প্রতি দয়া পরবশহয়ে হাবশাতে হিজরত করার নির্দেশ দেন। হাবশার বাদশা নাজ্জাশী ন্যায়পরায়ণ  দয়ালু ছিলেন বলে হাবশাকেইহিজরতের জন্যে মনোনীত করা হল। নাজ্জাশী মূর্তিপূজারী ছিলেন না। নবুয়্যাতের পঞ্চম বছর মুহাজিরদের প্রথম দলে ছিলেন দশ জন পুরুষ  চার জন মহিলা। তারা কুরাইশদের অজান্তে চুপিসারে হাবশার উদ্দেশ্যে রওয়ানাহন।
কিছুদিন পর আরো একটি মুহাজির দল তাদের সাথে মিলিত হলেন। পুরুষমহিলাশিশু সহ তাদের মোট সংখ্যাছিল প্রায় একশো জন। বাদশা নাজ্জাশী তাদের সম্মান দেন। তাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করেন এবং সেখানেনিরাপদে বসবাস করার অনুমতি দেন।
15.    তায়েফ গমন
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আশ্রয়দাতা চাচা আবূ তালিবের মৃত্যুকে কুরাইশরা সুযোগ হিসেবেগ্রহণ করল। তার উপর নির্যাতনের মাত্রা পূর্বের চেয়ে অনেক বাড়িয়ে দিল।  কঠিন পরিসি'তিতে সহযোগিতা আশ্রয় পাওয়ার আশায় তিনি তায়েফ গমন করলেন। কিনসেখানে উপহাস  দুর্ব্যবহার ছাড়া আর কিছুইপেলেন না। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে পাথর নিক্ষেপ করে আহত করে। ফলে তিনি মক্কায়ফিরে আসেন।
16.    বিভিন্ন গোত্রের নিকট রাসূলের উপস্থিতিঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজের মৌসুমে মক্কায় আগত বিভিন্ন গোত্রের নিকট দাওয়াত নিয়েউপস্থি' হন। তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং শত্রুদের থেকে আত্মরক্ষা  দাওয়াতের নিরাপত্তাবিধানে  সহযোগিতা কামনা করেন।
তবে কোন গোত্রই এতে সাড়া দিল না। কারণকুরাইশরা তাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং তাদেরকে তারনিকট হতে দূরে রাখার কৌশল অবলম্বন করে। ইত্যবসরে মদীনার নেতৃস্থানীয় ছয়জন লোক রাসূলের সাথেসাক্ষাৎ করেন এবং কুরাইশদের ভয়ে গোপনে তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। তারা নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেমানুষের সাথে ইসলাম সম্পর্কে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চরিত্র  দাওয়াতের সত্যতাসম্পর্কে আলোচনা করেন। এবং মদীনাবাসীদের মাঝে ইসলাম প্রচারের কাজ করেন। ফলে অনেকেই ইসলামগ্রহণ করেন।

17.    আকাবার প্রথম বাইয়াত:
নবুয়্যাতের দ্বাদশ বছর হজ্জের মৌসুমে বার জন লোক মদীনা হতে বের হয়ে মিনাতে আকাবার প্রথম বাইআতেরসময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে দেখা করে এবং বাইয়অতে অংশ গ্রহণ করেন। বাইয়াতকে ইসলামের ইতিহাসে আল আকাবাতুল উলা’ প্রথম বাইয়াত বলা হয়। মদীনায় ফিরে যাবার সময়রাসূল তাদের সাথে মুসআব ইবনে উমায়ের রাকে কুরআন তিলাওয়াত এবং দ্বীন শিখানোর জন্য পাঠান।
18.    আকাবর দ্বিতীয় বাইয়াত:
আকাবর প্রথম বাইয়াতের পরবর্তী বছর নবুয়্যাতের তেরোতম বছর হজের মৌসুমে সত্তুর জন পুরুষদুই জনমহিলা মক্কার উদ্দেশ্যে হজ পালনের লক্ষ্যে মদীনা হতে রওয়ানা হন এবং কুরাইশদের অগোচরে গোপনে মিনাতেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করেন যাতে করে কুরাইশরা না দেখে। আর তারা সকলেরাসূলের চাচা আব্বাসআবূ বকর এবং আলী ইবনে আবু তালিবের উপসি'তিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন।  বাইয়াতকে ইসলামের ইতিহাসে ‘আল-আকবাতুস সানীয়াহ’ বলা হয়।এতে তারা জান-মালের বিনিময়ে রাসূল কে রক্ষা করার অঙ্গীকার করেন। তারা তাঁকে  মর্মে আশ্বস-করলেন যেতিনি যদি তাঁদের দেশে তাঁদের নিরাপত্তায় হিজরত করেন তাহলে তারা স্বাগত জানাবেন। রাসূলেরনিরাপত্তার উদ্দেশ্যে তাদের দেশে হিজরত করাকে স্বাগত জানানো হবে।
19.    হিযরত  মক্কা ত্যাগ করার সিদ্ধান- :
কুরাইশরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তুতারা ব্যর্থ হয় এবং আল্লাহতাআলাকে তাকে হেফাযত করেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় ঘর থেকে বের হন এবং আল্লাহ তাআলা কাফেরদের চক্ষু অন্ধ করেদেন যাতে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখতে না পারে। তিনি চলতে চলতে মক্কার বাইরেস্বীয় বন্ধু আবু বকর সিদ্দীক রাএর সাথে মিলিত হন। অতঃপর তারা উভয়ে এক সাথেই পথ চলা আরম্ভকরেন।   সওর’ নামক পাহাড়ে পৌঁছে একটি গুহায় তিন দিন পর্যন্ত আত্মগোপন করেন। আব্দুল্লাহ বিন আবূবকর রাতাদের নিকট কুরাইশদের সংবাদ পৌঁছাতেন এবং তার বোন আসমা খাদ্য  পানীয় পৌঁছাতেন।তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তার সঙ্গী গুহা হতে বের হন এবং ইয়াসরিব (মদীনা)অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন।
20.    ইয়াসরিবে (মদীনানতুন অধ্যায়ের সূচনা :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় পৌঁছে তাকওয়ার ভিত্তিতে ইসলামের সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণকরেন। বর্তমানে মদীনা শরীফে  মসজিদটি “মসজিদে কুবা” নামে পরিচিত।
মদীনাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তা হচ্ছে মসজিদে নববীনির্মাণ এবং মুহাজির  আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন। প্রথম কাজ  সর্বপ্রথম পরিকল্পনা যা রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্ধারণ করেনতা ছিল মসজিদে নববী নির্মাণ এবং আনসার  মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব'াপন করা।
21.    ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধঃ
আবূ সুফিয়ানের কাফেলা -
কুরাইশদের একটি ব্যবসায়ী দল সিরিয়া থেকে বিশাল বাণিজ্যিক পণ্য নিয়ে মক্কা প্রত্যাবর্তন করছে মর্মে সংবাদছড়িয়ে পড়ল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ব্যাপারে অবগত হলে উক্ত সম্পদ দখল করারসংকল্প ব্যক্ত করেন। কারণ ইতিপূর্বে মক্কা বাসীরা মুহাজিরদের সম্পদ দখল করে নিয়েছিল। দলপতি আবূসুফিয়ান রাসূল এর সংকল্পের কথা জানতে পেরে এক লোককে কুরাইশদের নিকট পরিসি'তি সম্পর্কে সংবাদদানের জন্য পাঠালেন। সংবাদ পেয়ে কুরাইশরা বাণিজ্যিক কাফেলা রক্ষার্থে দ্রুত বের হয়ে আসল। এদিকে আবূসুফিয়ান আগেই কাফেলা সহ পলায়ন করতে সক্ষম হয় এবং বেঁচে যায়।
কুরাইশরা মক্কায় ফিরে যেতে চাইল কিনকুরাইশ নেতারা বিশেষত আবূ জাহেল মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকরার ঘোষণা দিল এবং প্রায় এক হাজার যোদ্ধার একটি সেনাদল মদীনাভিমুখে পাঠাল।
•    যুদ্ধের অনুমতি .
لما ازداد طغيان المشركين على المسلمين، أمر الله رسوله صلى الله عليه وسلم بقتالهم بقوله تعالى: وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ ﴿১৯০﴾ (البقرة : ১৯০)
মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের নির্যাতন যখন অসহনীয় পর্যায়ে বেড়ে গেল আল্লাহ তাআলা তখন আপনরাসূলকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেন। আল্লাহ বলেন :  যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তোমরাআল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। অবশ্য কারো প্রতি বাড়বাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” (সূরা বাকারাহ : ১৯০)
নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরামর্শ করে মুহাজির  আনসারগণের নিয়ে গঠিত প্রায় তিনশত তের জনের একটি সেনাদল নিয়ে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার লক্ষ্যে বের হলেন।
হিজরী দ্বিতীয় সনের ১৭ রামাযান বদর নামক স্থানে উভয় দল মুখোমুখি হয় এবং সেখানেই বদর যুদ্ধ সংঘটিতহয়।  যুদ্ধে মুসলমানরা মহা বিজয় লাভ করেন।  যুদ্ধে মুসলমানগণ অনেক গনিমতের সম্পদ লাভ করেন।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের মাঝে সেগুলো বণ্টন করে দেন।  যুদ্ধে মোট সত্তুর জনমুশরিক নিহত হয় এবং সত্তুর জন বন্দী হয় আর মুসলমানদের শহীদের সংখ্যা মাত্র চৌদ্দজন।
22.    উহুদ যুদ্ধ :
কুরাইশদের প্রতিশোধ প্রস্তু'তি:
বদর যুদ্ধে কুরাইশরা শোচনীয় পরাজয় এবং নিজেদের বড় বড় নেতা হারিয়ে দুঃখ ভারাক্রানহৃদয়ে মক্কায়প্রত্যাবর্তন করার পর তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য মুসলমানদের পক্ষ হতে হুমকির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করে।ফলে তারা পূর্ণ এক বছর যাবৎ সৈন্য  সম্পদ সঞ্চয় এবং প্রতিবেশী গোত্রীয় মিত্রদেরকে সহায়তা প্রদানেরআহ্বান সহ জোর প্রস'তি গ্রহণ করে এবং আবূ সুফিয়ানের নেতৃত্বে তিন হাজারের অধিক একটি বিশাল সেনাদলগঠন করে।
•    উহুদ অভিমুখে যাত্রা .
নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট কুরাইশদের আগমন বার্তা পৌঁছোলে তিনি মুহাজির আনসার নিয়ে গঠিত এক হাজার যোদ্ধার একটি বিশাল সেনাদল নিয়ে তাদের প্রতিরোধ করার জন্য বের হনএবং উহুদ পাহাড়ের ঢালুতে অবস্থান গ্রহণ করেন। পাহাড় পিছনে রেখে তিনি সৈন্যদের সুসংগঠিত  বিন্যস্তকরেন। যে কোন পরিসি'তিতে স্থান ত্যাগ না করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন।
•    প্রাথমিক বিজয়  তিরন্দাজদের দায়িত্বে অবহেলা :
 যুদ্ধের শুরু ভাগে মুসলমানদের জয় হল এবং মুশরিকরা পিছু হটল। কিনমুসলিম তীরান্দাজগণ গনিমতেরমাল সংগ্রহণ করতে গিয়ে স্বীয় 'ান ত্যাগ করে বসলেন।
•    মুশরিকদের জড়ো হওয়া  সুযোগ গ্রহণ :
কাফেররা  সুযোগে তীর নিক্ষেপের স্থানগুলো দখল করে নিল এবং মুসলমানদের পিছন দিক থেকে তীর নিক্ষেপকরতে লাগল। যার কারণে মুসলমানদের কাতার ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। এতে অনেক মুসলমান শাহাদাত বরণকরেন। তাদের মধ্যে শহীদগণের সরদার হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিব রাছিলেন।  যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুখমণ্ডল এবং দন্ত মুবারক আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয় হিজরী সনের তৃতীয় বছর শাওয়াল মাসের ১৫ তারিখ রোজ শনিবার।
23.    খন্দকের যুদ্ধঃ
•    ইয়াহুদীদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ  কুরাইশদের ষড়যন্ত্র :
কুরাইশরা মদীনার মুসলমানদের সমূলে ধ্বংস করে দিতে চাইল। যুদ্ধের প্রকৃত কারণমুসলমানদের সাথেবিশ্বাসঘাতকতাতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র  হিংসাত্মক আচরণের কারণে যে সব ইয়াহুদীদের রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা হতে তাড়িয়ে দেন তারা মক্কায় কুরাইশদের দলভুক্ত হয়। কুরাইশদেরকেমুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রেরণা জোগায় এবং তাদেরকে জনবলটাকা-পয়সা  অস্ত্র-শস্ত্র দিয়েসহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
•    ধন সম্পদ একত্রিকরণ এবং বিভিন্ন গোত্রকে উৎসাহ প্রদান
ইয়াহুদীদের পরামর্শ অনুসারে মক্কা বাসী ধন-সম্পদ জোগাড় করতে আরম্ভ করল। কুরাইশরা  ইয়াহুদীরাতাদের স্বীয় গোত্র  মিত্রদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানাল। পঞ্চম হিজরীতে আবূ সুফিয়ানের নেতৃত্বে দশহাজারেরও বেশি যোদ্ধা মদীনাভিমুখে রওয়ানা হয়। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করা তাদের নিশ্চিহ্ন করা।
•    সাহাবীদের সাথে মত বিনিময়  সালমান-এর পরিখা খননের পরামর্শ প্রদান :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশদের প্রস'তি  প্রতিজ্ঞা সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর করণীয়নির্ধারণে সহাবাগণের সাথে পরামর্শ করেন। তারা সিদ্ধানকরেন মুসলমানগণ মদীনায় অবস্থান করে প্রতিরোধকরবে। মদীনার উত্তর পার্শ্বের সীমান্ত অরক্ষিত থাকায় সালমান ফারসী রামদীনায় দুশমনদের প্রবেশে বাধাগ্রস্থকরার লক্ষ্যে উত্তর পার্শ্বে পরিখা খননের পরামর্শ দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালমান ফারসীরাএর পরামর্শ গ্রহণ করেন।
মুসলমানগণ পরিখা খনন আরম্ভ করেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই মুসলমানগণের সাথেযখন কাজে অংশগ্রহণ করেন। পনেরো দিনের মধ্যে পরিখা খনন সম্পন্ন হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলা  শিশুদের দুর্গে আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশ দেন। এক হাজারেরও বেশি মুসলিম যোদ্ধা মুশরিকদেরসাথে যুদ্ধ করেন এবং মদীনা প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত হন।
•    কাফের সেনাদের অবস্থান :
মুশরিক সৈন্যরা পরিখার অদূরে মদীনার বাইরে অবস'ান করতে বাধ্য হয়। কেননা তাদের অশ্বগুলো পরিখাঅতিক্রম করতে পারেনি। অতঃপর তাদের অশ্বারোহীরা নিহত হলে অন্যরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করে। সময় পিছন দিক থেকে মুসলমানদেরকে আক্রমণের লক্ষ্যে বনু কুরাইযার ইয়াহুদীরা তাদের নিরাপত্তাবিধানকারী দুর্গগুলোর ফটক উন্মুক্ত করতে সম্মত হল। নুয়াইম বিন মাসউদ রাযার ইসলাম গ্রহণের খবরকুরাইশ  ইয়াহুদীরা জানত না তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির অনুমতিদেন। তিনি উক্ত কাজে সফল হন
•    আল্লাহর সৈনিক:
এক মাস পর্যন্ত মদীনা অবরুদ্ধ ছিল। প্রচণ্ড শীতের গভীর অন্ধকার রাত্রিতে প্রবল বাতাস  তুফান প্রবাহিত হলএতে মুশরিকদের তাবু ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হল এবং তাদের হাড়ি পাতিল সহ যাবতীয় সরঞ্জাম লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল এবংতাদের উপর মরুভূমির পাথর  বালূ বর্ষিত করা হল। আর আল্লাহ তাআলা তাদের অন-রে ভীতি সঞ্চারকরলেন।
আবূ সুফিয়ান তার উটে আরোহন করল এবং দৌড়ে পলায়ন করল। অন্যান্য সৈন্যরাও তারই পদাঙ্ক অনুসরণকরল। এভাবে মুশরিকদের ব্যর্থতা  রণক্ষেত্র থেকে পলায়নের মাধ্যমে আহযাব যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটল।
وصدق الله حيث يقول: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَاءَتْكُمْ جُنُودٌ فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيحًا وَجُنُودًا لَمْ تَرَوْهَا وَكَانَ اللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرًا ﴿﴾  (الأحزاب)
আল্লাহ তাআলা সত্যিই বলেছেন: “হে মুমিনগণতোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ কর,যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিলঅতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে ঝঞ্ঝা বায়ু এবং এমনসৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলাম যাদেরকে তোমরা দেখতে না। তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন।” (সূরাআহযাব : )
24.    হুদাইবিয়ার সন্ধি :
যষ্ঠ হিজরীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমরা করার লক্ষ্যে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। সফরে তাঁর যুদ্ধ করার কোন ইচ্ছা ছিল না। চৌদ্দ শত আনসারী  মুহাজির সাহাবী তাঁর সফরের সাথি হন।যখন তারা হুদাইবিয়া নামক 'ানে পৌঁছেন সকলে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় অবতরণ করেন। কুরাইশরা সংবাদ জানতে পেরে শপথ কল যেতারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তার সাথীদেরকে মক্কায়প্রবেশ করতে দেবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উসমান রাকে কুরাইশদের নিকট  খবর দিয়ে প্রেরণ করেন যেতারাযুদ্ধের জন্য মক্কার দিকে রওয়ানা হননি। বরং তারা শুধুমাত্র উমরার উদ্দেশ্যেই মক্কায় প্রবেশ করতে চান।তারপর তারা আলোচনায় বসার জন্য সম্মত হয়।
আলোচনা আরম্ভ হলে তা সন্ধির মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।  সন্ধিকেই হুদাইবিয়ার সন্ধি বলা হয়। সিদ্ধানহয় রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উমরা পালনকে এক বছর পিছিয়ে দেবেন এবং দশ বছর যাবত যুদ্ধ বন্ধথাকবে। আর যে কোন গোত্র তাদের ইচ্ছানুসারে যে কোন দলের অন-র্ভুক্ত হতে পারবে।  চুক্তির ফলেখোযাআ’ গোত্র মুসলমানদের সাথে মিলিত হল এবং বনু বকর গোত্র কুরাইশদের সাথে মিলিত হল। সন্ধি চুক্তিসম্পন্ন হওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পশু জবেহ করেন এবং মাথা মুড়িয়ে ফেলেন।মুসলমানগণ তাঁর অনুকরণ করেন। অতঃপর তিনি মুসলমানদেরকে নিয়ে মদীনায় ফেরত আসেন।

25.    মক্কা বিজয় :
হুদায়বিয়ার সন্ধির পর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন গোত্রে তাঁর দাওয়াতী কর্মসূচীঅধিক পরিমাণে বিস্তৃতি ঘটাতে সক্ষম হন। ফলে এক বছরের মাথায় মুসলমানদের সংখ্যা অধিক হারে বৃদ্ধিপেল। এরই মাঝে কুরাইশদের সাথে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ বনু বকর মুসলমানদের মিত্র কবীলায়ে খুযাআর উপরআক্রমণ করল। এর অর্থ দাঁড়াল করাইশ এবং তার মিত্ররা হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ করল।
নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  সংবাদ পেয়ে অত্যধিক ক্রুদ্ধ হন এবং মক্কা বিজয়ের উদ্দেশ্যে দশহাজার যোদ্ধার একটি বিশাল সেনাদল গঠন করেন।
তখন ছিল হিজরী অষ্টম বর্ষের রমাযান মাস। এদিকে কুরাইশরা নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর মক্কাভিমুখে অভিযানের সংবাদ পেয়ে তাদের নেতা  মুখপাত্র আবূ সুফিয়ানকে ক্ষমা প্রার্থনাসন্ধি চুক্তিবলবৎ এবং চুক্তির মেয়াদ আরো বাড়ানোর প্রস-াব দিয়ে নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরনিকট প্রেরণ করেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ক্ষমার আবেদন নাকচ করে দিলেন।কেননা তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। আবূ সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ ভিন্ন বাঁচার আর কোন উপায় না দেখে ইসলামগ্রহণ করেন। অতঃপর সেনাদল (মক্কাভিমুখেরওয়ানা হয়ে মক্কার কাছাকাছি আসলে মক্কাবাসী বিশাল দল দেখেআত্মসমর্পণ করে। আর নবী আকর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানগণকে সঙ্গে নিয়ে বিজয়ী বেশে মক্কাপ্রবেশ করেন।
(وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا ﴿৮১﴾ سورة الإسراء : ৮১)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করেন এবং নিজ হাতের ছড়ি দ্বারা কাবারআশেপাশে রাখা সকল প্রতিমা ভেঙে চুরমার করে দেন। আর স্বীয় রবের শেখানো আয়াত পাঠ করতে থাকেন,যার অর্থ :
বলসত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছেনিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।” (সূরা ইসরা : ৮১)
অতঃপর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ঘোষণা করেন মক্কাপবিত্র  নিরাপদ। আল্লাহ তাআলা শুধুমাত্র তাঁর নবীর খাতিরেই কিঞ্চিৎ সময়ের জন্যে (যুদ্ধহালাল করেছেন।তাঁরপর আর কারো জন্যে কখনো হালাল করা হবে না।
قوله تعالى :
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ ﴿﴾ وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا ﴿﴾ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا ﴿﴾ (سورة النصر )
এরপর সমবেত মক্কা বাসীর প্রতি লক্ষ্য করে বললেনআমি তোমাদের সাথে কেমন আচরণ করব বলে তোমাদেরধারণাতারা বললসহানুভূতিশীলউদাহরণ ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ। আপনি মহৎ মহানুভবের ভ্রাতুষ্পুত্র। নবীকরীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সকলকে ক্ষমা করে দিয়ে বললেন : তোমরা সকলেই মুক্ত। এরপরমানুষ দলে দলে আল্লাহর দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হতে লাগল। আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করলেন: “যখন আল্লাহর সাহায্য বির্জ আসবে এবং আপনি মানুষকে আল্লাহর দ্বীনে দলে দলে প্রবেশ করতে দেখবেন।” (সূরা নাসর : -)
26.      বিদায় হজ্জ
দশম হিজরী সনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদেরকে তাঁর সাথে হজব্রত পালন  হজেরআহকাম শিক্ষা গ্রহণ করতে মক্কা যাবার আহ্বান জানা।
قول الله تعالى : الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا (سورة المائدة : )
তাঁর আহ্বানে এক লক্ষের মত লোক সাড়া দিল। তাঁরা যুলকাদাহ্‌ মাসে পঁচিশ তারিখ তাঁর সাথে মক্কা পানে বেরহন। বাইতুল্লাহতে পৌঁছে প্রথমে তওয়াফ করেন। অতঃপর যিলহজ্জ মাসের আট তারিখ মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানাহন। এরপর নয় তারিখ জাবালে আরাফাহ অভিমুখে যাত্রা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেথাঅবস'ান করেন এবং মুসলমানদের উদ্দেশ্যে তার ঐতিহাসিক অমর ভাষণ দান করে তাদেরকে ইসলামী বিধি-বিধান  হজের আহকাম শিক্ষা দেন এবং আল্লাহ তাআলার নিম্নোক্ত বাণী তিলাওয়াত করে শুনান-  আজ আমিতোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার নিআমত পরিপূর্ণ করে দিলামএবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।
27.    পরম সুহৃদ সান্নিধ্যে :
বিদায় হজ্জ পরবর্তী বছর নবী আকরাম জ্বরাক্রান্ত  হয়ে অসুস্থহয়ে পড়েন এবং প্রিয় সহধর্মিণী আশেয়া রা.এর ঘরে শয্যা গ্রহণ করেন। পরে রোগের তীব্রতা বাড়লে হিজরী একাদশ সনের ১২ রবীউল আউয়াল সোমবার৬৩ বছর বয়সে স্বীয় প্রতিপালকের সান্নিধ্যে চলে যান।
قوله تعالى: وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ ﴿১৪৪﴾ (سورة آل عمران : ১৪৪)
রাসূল সুএর তিরোধানে মুসলমানগণ যার পর নাই শোকাহত হন এবং খুব ব্যথিত হন।  পরিসি'তিতে আবুবকর রাভাষণ দেয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে বলেন : যাঁরা মুহাম্মাদের উপাসনা করত তারা জেনে রাখুক যে,মুহাম্মাদ আজ মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যারা আল্লাহর ‘ইবাদত করেনিশ্চয় আল্লাহ তাআলা চিরঞ্জীবকখনোমৃত্যু বরণ করবেন না। এরপর নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন : “আর মুহাম্মাদ একজন রাসূল বৈ কিছুনন। তার পূর্বেও বহু রাসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন,তবে তোমরা পশ্চাদপসরন করবেবস্তু'কেউ যদি পশ্চাদপসরন করেতবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি হবেনা। আর যারা কৃতজ্ঞ আল্লাহ তাদের সাওয়াব দান করবেন।
(সূরা আলে ইমরান : ১৪৪)
وَقَالَ الرَّسُولُ يَا رَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا
রসূল (সঃবলবেনঃ হে আমার পালনকর্তাআমার সম্প্রদায় এই কোরআনকে পরিত্যাক্ত ঘোষনাকরেছে। [ সুরা আল ফুরকান-৩০]

সুরা: ইয়াসিন আরবি & বাংলা উচ্চারণ

সুরা: ইয়াসিন بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ আরবি & বাংলা উচ্চারণ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল...