Saturday, January 26, 2019

রাসুল সাঃ কেন সুরমা ব্যবহার করতেন ?


বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম
   পরম করুনময় আল্লাহর নাম সরন করি
 সগ্রহকারি মোঃ রোকন সরকার
                                                             -----------------------------------

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্ব মানবতার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। তাইতো মুসলিম উম্মাহসহ ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে সবাই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের প্রতিটি বিষয়ই জানতে চায়। প্রিয়নবির প্রতিটি কাজ ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে নিয়োজিত হয়েছে গবেষণায়।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুরমা ব্যবহারও বাদ যায়নি এ গবেষণা থেকে। ইমাম বায়হাকি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সুরমা ব্যবহার, হুকুম ও পদ্ধতি সম্পর্কে একটি হাদিস ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ‘ইছমিদ’ সুরমা ব্যবহার করো। কারণ, তা চোখের জ্যোতি বাড়ায়, চোখ পরিস্কার রাখে এবং অধিক ভ্রু উৎপন্ন করে।
তিনি (ইবনে আব্বাস) আরো বলেন, ‘প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুরমাদানি (সুরমা রাখার পাত্র) ছিল। প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর আগে ডোন চোখে ৩বার এবঙ বাম চোখে ৩বার সুরমা লাগাতেন।’ (সুনানে বায়হাকি)
সুরমা ব্যবহারের হুকুম ও পদ্ধতি
সুরমা ব্যবহার চোখের জন্য অনেক উপকারি। উল্লেখিত হাদিসে সুরমা ব্যবহারের হুকুম ও পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। আর তা লাগানো প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত। বিশেষ করে হাদিসে বর্ণিত পদ্ধতিতে সুরমা ব্যবহারে রয়েছে সাওয়াব।

সুরমা ব্যবহারের উপকারিতা বিজ্ঞানের গবেষণায়ও প্রমাণিত। হাদিস ও বিজ্ঞানের গবেষণায় সুরমা ব্যবহারে চোখের বড় উপকারিতাগুলো হলো-
> সুরমা চোখের জন্য ছোঁয়াচে সব ধরনের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে।
> চোখের প্রবেশকৃত ধূলা ও ক্ষতিকর পদার্থগুলো নিঃসরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
> চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধক জীবাণুকে ধ্বংস করে।
> চোখে জ্বালাপোড়া নিরাময় করে।
সুরমা ব্যবহারে করণীয়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে ‘ইছমিদ’ সুরমা ব্যবহারের উপদেশ দিয়েছেন এবং তার উপকার বর্ণনা করেছেন। হাদিসে এসেছে-
– হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা ঘুমের সময় অবশ্যই ‘ইছমিদ’ সুরমা ব্যবহার করবে। কারণ, তা ব্যবহারে চোখের জ্যোতি বাড়ে এবং অধিক ভ্রূ জন্মে।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আবু ইয়ালা)
– হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের জন্য ইছমিদ সুরমা সর্বোত্তম। কারণ তা (ইছমিদ সুরমা) ব্যবহারে দৃষ্টি বাড়ায় এবং অধিক ভ্রূ জন্মায়।’ (ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, মুসতাদরেকে হাকেম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে চোখের যাবতীয় কল্যাণে প্রিয়নবির অনুসরণ ও অনুকরণের তাওফিক দান করুন। আমিন।

হারাম উপার্জনের দান অাল্লাহ কবুল করেন না

বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম
   পরম করুনময় আল্লাহর নাম সরন করি
 সগ্রহকারি মোঃ রোকন সরকার
                                                             -----------------------------------
মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের প্রদান করেছেন যথার্থ পথনির্দেশ। তাকে কখনোই থাকতে হয় নি দিশেহারা হয়ে। আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘আমি প্রতিটি জাতির জন্যই রাসুল প্রেরণ করেছি।’ আল কুরআন। মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতরণের মাধ্যমে মুহাম্মদ (সাঃ) এর দ্বারা মানব জাতিকে প্রদান করা হয় পূর্ণাঙ্গ এক জীবনব্যবস্থা। তাদের জন্য করণীয়-বর্জনীয় সব কিছুর স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে তাতে। মহান আল্লাহ তায়ালা সকল সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা। তাই সৃষ্টির মন্দ এবং ভালো সম্পর্কে তিনিই সর্বাধিক পরিজ্ঞাত। সৃষ্টির জন্য কল্যাণকর বিষয়কে তিনি বৈধ করেছেন আর অকল্যাণকর বিষয়কে করেছেন অবৈধ। হারাম ইসলামি শরিয়তের একটি পরিচিত পরিভাষা। অর্থ অবৈধ, নিষিদ্ধ, অননুমোদিত। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় যে সকল বিষয়ের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে অকাট্য দলিল রয়েছে তাকে হারাম বলে। প্রতিটি ক্রিয়ারই কোনো না কোনো প্রতিক্রিয়া রয়েছে। হারামও এর ব্যতিক্রম নয়। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে হারামের বিস্তৃত প্রভাব রয়েছে। মন্দ খাদ্য খেলে শরীরে যেমন মন্দ প্রভাব দেখা যায়, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে হারামেরও তেমন মন্দ প্রভাব রয়েছে। সাধারণত মানুষ যে সব হারামে লিপ্ত হয় তা হলো, খাদ্য গ্রহণ, উপার্জন ও হারাম কাজ সম্পাদন। হারাম খাদ্য গ্রহণের দ্বারা মানব মনে সৎ কাজের ইচ্ছা হ্রাস পায় এমন পাপ কাজের আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হয়। হযরত মাওলানা মোস্তফা কামাল ম.জি.আ. বলতেন, আমি একবার এক দাওয়াতে গেলাম। আর আগে থেকে আমার জানা ছিলো না যে, ঐ ব্যক্তির উপার্জন হারাম। না জানার কারণে এই ভেবে চলে গিয়ে ছিলাম যে, সে তো একজন মুসলিম। সুতরাং তার উপার্জন হালাল হবে এটাই স্বাভাবিক। কিছু খানা খেয়েও ফেললাম। এক পর্যায়ে জানতে পারলাম, তার উপার্জন হারাম। তখন সাথে সাথে খানা ছেড়ে উঠে গেলাম। কিন্তু ঐ যে না জেনে কয়েক লোকমা খেয়েছিলাম, তার মন্দ প্রভাব কয়েক মাস পর্যন্ত অনুভব করলাম। আর তাহলো, বারবার মনে গুনাহর ইচ্ছা জাগতো যে, অমুক গুনাহ করি, অমুক গুনাহ করি। হারাম কাজ করার দ্বারা ব্যক্তির লজ্জাশীলতা হ্রাস পায়। মন থেকে আল্লাহ ভীতি কমে যায়। সমাজে অনিষ্টের সৃষ্টি হয়। পরকালীন শাস্তির উপযুক্ত হতে হয়। মানব জীবনে হারামের যে সব দিক রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম বিষয় হলো হারাম উপার্জন। ব্যক্তি যদি হারাম উপার্জন করে তাহলে সে স্বাভাবিকভাবেই হারাম আহার করে। হারাম পরিধান করে। আর এ সম্পর্কে ইসলামে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।
হারাম কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) এর; বিরুদ্ধাচারণ করা হয়। কেননা কুরআন ও হাদিসে হালাল ও হারামকে ¯পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ কারণে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হালাল উপার্জন করা ওয়াজিব। এ সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয় হালাল স্পষ্ট এবং হারাম স্পষ্ট এ দুটির মাঝে সন্দেহযুক্ত বিষয় আছে অনেক লোক তা জানে না। যে সন্দেহযুক্ত জিনিস থেকে বেঁচে থাকবে সে তার দিন এবং সম্মানকে ত্রুটি মুক্ত রাখলো। আর যে সন্দেহযুক্ত জিনিষের মধ্যে পতিত হলো সে হারামের মধ্যে পতিত হলো। যদি কেউ এ সম্পর্কে না জানে তাহলে তার জ্ঞানীদের নিকট থেকে জেনে আমল করা ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সুতরাং জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর, যদি তোমরা না জানো।’ [সূরা নাহল:৪৩] হারাম খাদ্য দ্বারা গড়া শরীর কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জান্নাতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে হারাম অনেক বড় একটি প্রতিবন্ধক। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আর যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে ওঠে তার জন্য দোজখের আগুনই উত্তম। [জামিউস সগির: ৮৬৪৮] হারাম উপার্জনের দান আল্লাহ কবুল করেন না। অনেকে হারাম সম্পদ উপার্জন করে পাপমোচনের আশায় দান খয়রাত করে থাকেন। হারাম উপার্জনের দানে সাওয়াব হওয়া তো দূরের কথা এ দান আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলূল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা পবিত্রতা ছাড়া কোনো সালাত কবুল করেন না, আর হারাম উপার্জনের দানও আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না।’ [ইবনে খুজাইমাহ: ১০] হারাম উপার্জনের দ্বারা সমাজে জুলুম অত্যাচারের দ্বারা উন্মোচিত হয়। যেমন ঘুষ নেয়া হারাম। এর দ্বারা স্পষ্টভাবে সৃষ্টির উপর জুলুম করা হয়।
ঘুষের সম্পদের যে গোস্ত হয় তার ঠিকানা জাহান্নাম, এ সম্পর্কে হযরত আবু বকর (রাঃ) এর ঘটনা ইমাম বুখারি (রহঃ) মানাকেব অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর একজন ক্রীতদাস ছিলো যে তার ট্যাক্স আদায় করতো, হযরত আবু বকর (রাঃ) ট্যাক্সের পয়সায় তার সংসার চলতো, সে একদিন তার জন্য একটা জিনিস আনলো। হযরত আবু বকর (রাঃ) তার থেকে খেলেন। ক্রীতদাসটি তাকে বললো এটা কি তা আপনি জানেন? তিনি প্রশ্ন করলেন এটা কি? সে বললো- আমি ইসলাম পূর্বযুগে এক ব্যক্তির রাশিফল গণনা করেছিলাম। আর এ রাশিফল গণনা করতে আমি তার সাথে ধোঁকাবাজী করতাম। তার সাথে আজ আমার সাক্ষাৎ হওয়ার পর সে আমাকে ঐ জিনিস দিয়েছিলো। তার থেকেই আপনি খেয়েছেন, হযরত আবু বকর (রাঃ) মুখের ভেতর হাত দিলেন এবং পেটের ভেতর যা ছিলো সব বমি করে দিলেন। হযরত কা’ব বিন উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে রাসুল (সাঃ) আমাকে বললেন, ‘হে কা’ব বিন উজরা! আমি আল্লাহ তার নিকট তোমার জন্য ঐ সমস্ত শাসক থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যারা আমার পরে আসবে। যে ব্যক্তি তাদের দরবারে যাবে তাদের মিথ্যাকে সত্য বলে সত্যায়ন করবে। তাদের অত্যাচারে সাহায্যে করবে সে আমার সাথে নয়। আমিও তার সাথে নই। সে হাউজে আসতে পারবে না। আর তাদের দরবারে গেলো অথবা না গেলো, তাদের মিথ্যাকে সত্য বলে সত্যায়ন করলো না, তাদের অত্যাচারে সাহায্যে করলো না। সে আমার সাথে আমিও তার সাথে এবং সে হাউজের কাছে আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে। হে কা’ব ইবনে উজরা নামাজ হলো দলিল-প্রমাণ। সিয়াম হলো শক্ত ঢাল। দান সদকা গুনাহকে তেমনই মিটিয়ে দেয় যেমন পানি আগুনকে মিটিয়ে দেয়। হে কা’ব ইবনে উজরা! ঐ মাংস বৃদ্ধি পায় না যা হারাম দ্বারা তৈরি হয়। বরং জাহান্নাম এর থেকে উত্তম।’
বর্তমানে হারাম উপার্জনের আরেকটি মাধ্যমে হলো সুদ। ইসলামে এটি একটি জঘন্য অপরাধ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কারভাবে সুদকে হারাম করেছেন। সুদ না ছাড়লে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার কথা বলেছেন। হাদিসে রাসুল (সাঃ) সুদ গ্রহণ করাকে নিজের মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার থেকেও নিকৃষ্ট বলেছেন। সুদ এমন এক হারাম যা সমাজের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়। অভাবীকে আরো অভাবী করে। আর ধনীকে করে আরও ধনী। এর মাধ্যমে এক শ্রেণির লোক নির্বিচারে শোষিত হয় আরেক শ্রেণির লোক বিনা পরিশ্রমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। হারাম উপার্জনের দ্বারা ব্যক্তির মধ্যে অতৃপ্তির সৃষ্টি হয়। দিন দিন তার মাঝে সম্পদের চাহিদা বাড়তে থাকে। আমরা দেখতে পাই, যে ব্যক্তি হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে লোভ লালসা তার মনের মধ্যে অনেক বেশি বাসা বাঁধে। সে মনে কখনো শান্তি পায় না। সব সময় কৃপণতা করে। তাদের হাত ভর্তি কিন্তু মন খালি। মানুষ তাদের সম্পর্কে বলে, ধনীরা গরিবদের সম্পদের প্রতি বেশি লোভাতু হয়। কেননা হাদিসের ভাষায় তারা হলো এমন যে, খাবার গ্রহণ করে তবে তাদের পেট ভরে না। আর যে সুদের কারবারের মধ্যে পড়ে যায়, সে তার থেকে তওবা করে না। ফলে সুদ গ্রহণ করা থেকে তার মধ্যে অনুশোচনা আসে না। আর যে ব্যক্তি মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, অন্যায় কাজ তার জন্য সুন্দর করে দেখানো হয়। সে নিজে সেটিকে ভালো মনে করে। ফলে কোনো বাহানা বা ষড়যন্ত্র করতে ত্রুটি করে না। আমরা দেখতে পাই তাদেরকে যারা মানুষের সাথে ধোঁকাবাজি করে মিথ্যার আশ্রয় নেয়, অথবা শুনতে পাই তাদে সম্পর্কে যারা কোনো কাজ করে দিয়ে তার পরিবর্তে ঘুষ নেয় অথবা জমির দালালি করে পয়সা নেয় তাদের এই হারাম উপায়ে অর্জন করতে অন্তর কাঁপে না। তারা মানুষের ন্যায্য অধিকার দিতে কার্পণ্য করে শ্রমিকের মজুরি ঠিকমতো দেয় না। আল্লাহ তায়ালার নিষিদ্ধ পথে কখনোই শান্তি, নিরাপত্তা মিলতে পারে না। পরকালীন এবং ইহকালীন উভয় জীবনেই হারাম ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। সবশেষে সেই দোয়া করি যা রাসুল (সাঃ) করেছেন- ‘হে আল্লাহ! হারাম থেকে বাঁচিয়ে হালাল আমাদের জন্য যথেষ্ট করে দিন। গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে আনুগত্য যথেষ্ট করে দিন। আপনি অনুগ্রহ করে অামাদের মুখাপেক্ষীহীন করে দিন।

মুমিন বান্দা ও কাফিরের মধ্যে বাহ্যিক পার্থক্য নামায


বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম
   পরম করুনময় আল্লাহর নাম সরন করি

 সগ্রহকারি মোঃ রোকন সরকার
                                                             -----------------------------------
নামায ত্যাগ করলে কুফরিতে নিপতিত হওয়ার আশংকা থাকে। জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায়, আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুমিন বান্দা ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত পরিত্যাগ করা। (সহীহ মুসলিম)
অর্থাৎ মুমিনরা নামায পড়ে আর কাফিররা নামায পড়েনা। যেহেতু একজন মুমিন আল্লাহ্ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে নামায ছাড়তে পারেনা। তাই আমি বলবো, যে ব্যক্তি মুসলমান হয়েও নামায পড়েনা, সে সত্যিই দুর্ভাগা।
নামায সম্পর্কিত মুমিন ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশক কতিপয় হাদীসে রাসূল :
১.হযরত বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমাদের ও তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে যে অঙ্গীকার (পার্থক্য) আছে, তা হচ্ছে সালাত। সুতরাং যে সালাত পরিত্যাগ করল, সে প্রকাশ্যে কুফরি করল। (মুসনাদে আহ্মাদ, জামে আত-তিরমিযী, আন-নাসায়ী, আবু দাঊদ ও ইবনে মাজাহ)
২.তাই যে কুফরী করছে, সে কি করে বেহেশতে যাওয়ার আশা করবে? প্রখ্যাত তাবেয়ী শাকীক ইবনে আব্দুল্লাহ আল উকাইলী (রহ.) বলেন, সাহাবায়ে কিরাম নামায ব্যতীত অন্য কোনো আমল ছেড়ে দেয়াকে কুফরি মনে করতেন না। (জামে আত-তিরমিযী)
৩.হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জনৈকা বেনামাযি নারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যে নামায পড়ে না সে কাফির। (জামে আত-তিরমিযী)
৪.হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল ইসলামে তার কোনো অংশ নেই। ইমাম আহমাদ (রহ.) মত প্রকাশ করেন, একজন লোক নামায অস্বীকার না করলেও কেবল নামায পরিত্যাগ করলেই কুফরির অন্তর্ভুক্ত হবে। তিনি নিম্নোক্ত হাদীসটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেন। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সর্বপ্রথম তোমরা দ্বীনের যা হারাবে তা হলো আমানত এবং সর্বশেষ দ্বীনের যা হারাবে তা হলো নামায। (শু‘য়াবুল ঈমান, সুনানে বায়হাকী)
৫.তাই এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন, সুতরাং ইসলাম থেকে চলে যাওয়া সর্বশেষ বস্তু যখন নামায, অতএব যে বস্তুর শেষ চলে যায় সে বস্তু সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যায়। এ জন্য আপনারা দ্বীনের সর্বশেষ অংশ (নামায)কে যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরুন। (কিতাবুস্ সালাত)
৬.রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন : যার ভিতর কুরআন নেই সে একটা উজাড় বা বিরান গৃহ। (আত-তিরমিযী ও দারিমী)
তাই আমি বলছি, যার ভিতর নামায নেই তার ভিতর কিছুই নেই। তার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখা ঠিক নয়। বেনামাযির কাছে নিজের নামাযি ছেলে-মেয়ে বিয়ে দেয়াও উচিত নয়। এটা ঠিক যে, অনেক তথাকথিত নামাযি দোযখে যেতে পারে, যারা লোক দেখানো নামায পড়ে। কিন্তু কোনো বেনামাযি ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবেনা। কারণ তার কাছে বেহেশতের দরজা খোলার কোনো চাবি নেই। অথচ জান্নাতের দরজায় বড় একটা তালা ঝুলে আছে। জাহান্নামের প্রহরীগণও নিকটে অবস্থান করবেন। তাই কেউই তাকে বেহেশতে নিতে পারবে না। তবে 

আমাদের সমাজে কেউ নামায না পড়লেই তাকে কাফির ধরা হয় না, যদি সে নামাযকে অস্বীকার না করে। অন্যথায় কাফির ধরা যাবে। যেসব হাদীস শরীফে স্পষ্টভাবে কাফির শব্দ এসেছে সেখানে উদ্দেশ্য হলো, সে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। উল্লেখ্য ঈমান হলো রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত বিধি-বিধানকে অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা আর তা কর্মে পরিণত করা তাই যদি কেউ ঈমান আনে কিন্তু কাজে পরিণত না করে, সে পূর্ণ মুমিন হবে না। যথাযোগ্য শাস্তি ভোগ করার পর নাযাত পাবে। যেমন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাই কোনো ব্যক্তি নামায না পড়লে সে সত্যিকার অর্থে পূর্ণ মুমিন হবে না।

হালাল রিজিক কেন জরুরি??



বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম
                                    
   পরম করুনময় আল্লাহর নাম সরন করি

  সগ্রহকারি মোঃ রোকন সরকার
                                                             ----------------------------------- 
হালাল খাদ্য আল্লাহ তাআলা নিয়ামত। তিনি মানুষকে হালাল খাদ্য গ্রহণের তাঁর এ নিয়ামতকে ভুলে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা মানুষকে হালাল খাদ্য গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে মানব জাতি! তোমরা পৃথিবীর দ্রব্য-সামগ্রী থেকে হালাল বস্তু আহার কর এবং (কখনও) শয়তানের অনুসরন করো না। নিশ্চয় সে (শয়তান) তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৬৮)
হালাল রিজিক বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় অনুগ্রহ। তিনি সৃষ্টি জগতে বান্দার জীবিকার ব্যাপারে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আমার অনুগ্রহের কথা কিন্তু ভুলে যেওনা যে, আমি তোমাদেরকে আহারের জন্যে এমন উত্তম খাদ্য হালাল করেছি যা অত্যন্ত সুস্বাদু; তোমরা আগ্রহের সঙ্গে তা আহার কর, সে সব খাদ্য তোমাদের দৈহিক বা মানসিক কোনো প্রকার ক্ষতি করে না।’
কুরআনের বিভিন্ন জায়গা আল্লাহ তাআলা হালাল খাদ্য গ্রহণের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। হালাল খাদ্য গ্রহণের উপকারিতাও বর্ণনা করেছেন। হাদিসে কুদসিতে বিশ্বনবি বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি আমার বান্দার জন্য হালাল যে সব সম্পদ দান করেছি তা তাদের জন্য হালালও ঘোষণা করেছি; আমি আমার বান্দাদেরকে একত্ববাদের অনুসারী রূপেই সৃষ্টি করেছি; কিন্তু শয়তান তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে এবং আমার হালাল স্থির করা বস্তুকে হরাম করেছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হালাল খাবার গ্রহণের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। হজরত সা’দ বি আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার জন্যে এ দোয়া করুন, আল্লাহ তাআলা যেন আমার সমস্ত দোয়া কবুল করেন। এর জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘সা’দ! হালাল ও উত্তম খাদ্য আহার কর; তাহলে আল্লাহ তাআলা তোমার দোয়াসমূহ কবুল করবেন। শপথ সেই মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার, যার হাতে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রাণ। হারাম খাদ্য মানুষের উদরে প্রবেশ করলে তার কারণে চল্লিশ দিন পর্যন্ত সে ব্যক্তির দোয়া কবুল করা হয় না। যে রক্ত-মাংস হারাম দ্রব্য দ্বারা গঠিত তা দোজখে যাবে।
দুনিয়াতে মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাপনে অর্থ-সম্পদের প্রয়োজন অত্যাধিক। কিন্তু জীবন ধারণের প্রয়োজনে অবৈধভাবে উপার্জন ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। বৈধভাবে জীবিকা উপার্জন কষ্টকর হলেও তা আল্লাহর কাছে অতিপ্রিয়।
অন্যায় ও অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়তে হবে। সম্পদ পুঞ্জিভুত করতে যাচ্ছেতাই অন্যায় অপকর্ম করে বেড়াতে হবে। এ সব বিষয়ে আল্লাহ তাআলা খুব কঠোরভাবে হুশিয়ারি দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে জীবিকা অর্জনের জন্য হালাল উপার্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। কারণ হালাল সম্পদ উপার্জন এবং জীবিকা ইবাদাত কবুলের পূর্বশর্ত।
দুনিয়াতে যেহেতু জীবন-যাপনে সম্পদের প্রয়োজন রয়েছে, তাই আল্লাহর বিধান মেনে বৈধভাবে আয়-উপার্জন করতে হবে। সম্পদ অর্জনের ভালোবাসা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ভাষায় ইরশাদ করেন, ‘এবং তোমরা ধন-সম্পদকে প্রাণভরে ভালোবাস।’ (সুরা ফজর : আয়াত ২০)
এ কথা মনে রাখতে হবে যে, বৈধভাবে সম্পদ উপার্জন মুমিন-মুসলমানের একটি প্রশংসনীয় কাজ। হালাল উপায়ে সম্পদ অর্জনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তুসামগ্রী ভক্ষণ করো। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না, নিঃসন্দেহে শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৬৮)
পৃথিবীতে যত নবি-রাসুলগণের আগমন ঘটেছে, তাদের সবাই নিজ হাতে উপার্জন করেই জীবিকা নির্বাহ করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিজ হাতে উপার্জিত খাবারই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট। আল্লাহর নবি হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে উপার্জিত রিজিকই গ্রহণ করতেন।’ (বুখারি)
অন্যায় ও অবৈধ পন্থায় উপার্জনকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কেননা অন্যায় পন্থা অবলম্বন করে উপার্জনে মানুষের সারা জীবনের ভালো কাজগুলো বরবাদ হয়ে যায়।
অন্যায় পথে অবৈধভাবে উপার্জনকারীকে আল্লাহ তাআলা তাঁর রহমত, রবকত ও মাগফিরাত থেকে বঞ্চিত করেন। তাদের আখিরাতের জীবন ধ্বংশে পর্যবশিত হয়। এমনকি হারাম উপার্জন ভক্ষণে মানুষের কোনো আমল-ইবাদাতও কবুল হয় না।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে সাদ! পবিত্র খাবার গ্রহণ করো, তবে তোমার দোয়া কবুল হবে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ। বান্দা যখন তার মুখে হারাম উপায়ে উপার্জিত কোনো খাবার গ্রহণ করে, আল্লাহ ৪০ দিন তার কোনো আমল কবুল করেন না। আর যে ব্যক্তি অবৈধ সম্পদ আর হারাম উপার্জিত অর্থে বেড়ে ওঠে, তার জন্য জাহান্নামের আগুনই উত্তম।’
শুধু তাই নয়! অবৈধ জীবিকা দ্বারা যেমন ইবাদাত কবুল হবে না; তেমনি অবৈধ সম্পদ তথা সুদ, ঘুষ, চুরি, হারাম ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যাবতীয় অন্যায় পথে উপার্জিত সম্পদের দান-অনুদানও আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
কেননা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া নামাজ আর চুরি ও আত্মসাতের সম্পদের সদকা কবুল হয় না।’ (মুসলিম)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, ‘একজন মানুষ লম্বা পথ সফর করে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। এরপর সে না ঘুমিয়ে রাত জেগে নামাজ পড়ে এবং আল্লাহর জিকির করে দোয়া করে-
‘হে আল্লাহ! তুমি আমার গোনাহ মাফ করে দাও। কিন্তু তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, কাপড়-চোপড় হারামসহ তার সবকিছুই হারাম। সুতরাং ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত শরীরে, না ঘুমিয়ে সে যত মনোযোগ সহকারেই দোয়া করুক না কেন, আল্লাহর দরবারে তা কবুল হবে না।’ (মিশকাত)
পরিশেষে
মুসলিম উম্মাহর উচিত- আয়-উপার্জনের ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া। আল্লাহ তাআলার ওপর অগাধ আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে উপার্জনে নেমে পড়া। তবেই আল্লাহ তাআলা উত্তম জীবিকা দান করবেন।
সর্বোপরি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই অমর কালজয়ী হাদিসটি সব সময় স্মরণ রাখা উচিত। আর তা হলো-
‘পৃথিবীর কোনো প্রাণীই তার রিজিক শেষ হওয়ার পূর্বে মারা যাবে না। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে সৎ পথ অবলম্বন করো। তাকদিরে লেখা রিজিক আসতে বিলম্ব হলেও অসৎ পথে উপার্জন করো না। আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই আল্লাহর কাছ থেকে হালাল জীবিকা পাওয়া সম্ভব।’ (মিশকাত)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর বিধান পালনের পাশাপাশি হালাল রিজিক উপার্জনের প্রশংসনীয় গুণের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

❒ স্ত্রীর পায়ুপথে গমন!

বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম
                                    
   পরম করুনময় আল্লাহর নাম সরন করি
                                                  
 সগ্রহকারি মোঃ রোকন সরকার
                                                                  -----------------------------------

🔸প্রশ্নঃ
আমাকে ক্ষমা করবেন যদি এই প্রশ্নটা আপনার কাছে আপত্তিকর মনে হয়, কিন্তু ইসলামের জ্ঞান অন্বেষণ করতে গিয়ে আমরা লজ্জা পেলে চলবে না, কারণ যদি আমরা সঠিক উপদেশ না পাই তাহলে আমাদের দ্বারা গুনাহ হয়ে যেতে পারে।

আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছে যে, কিছু আলেমদের মধ্যে এরকম একটি “কওল” (মতামত) আছে যে, যখন স্ত্রীর হায়েয (মাসিক স্রাব) চলমান থাকে, তখন (শুধুমাত্র স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে) পায়ুপথ দিয়ে সহবাস করা বৈধ। এই কথা কি সঠিক?
দয়া করে এর সাথে সম্পর্কিত আইন-কানুন এবং এর পরিণতি উল্লেখ করে দিন।

● উত্তরঃ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা-র জন্য এবং অসংখ্য সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি।

আপনার ক্ষমা প্রার্থনা মঞ্জুর করা হলো। এরকম বিষয়গুলোতে শরিয়াহর বিধান বুঝতে চেষ্টা করা হারাম কিংবা লজ্জাজনক নয়; এটা হওয়া প্রয়োজন। 

আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলতে হচ্ছে যে, কারও জন্য তার নিজের স্ত্রীর সাথে পায়ুপথ দিয়ে সহবাস করা একটি কবিরা গুনাহ, তা মাসিকের সময়ে ঘটে থাকুক অথবা তার বাইরে। রাসুলুল্লাহ  ﷺ তাকে অভিশাপ দিয়েছেন যে এমনটা করে!

✍ রাসুল  ﷺ বলেন,
“অভিশপ্ত সে যে তার স্ত্রীর কাছে তার পায়ুপথ দিয়ে গমন করে”। (ইমাম আহমাদ, ২/৪৭৯; এছাড়াও দেখুন সাহিহ আল-জামি, ৫৮৬৫)

✍ রাসুলুল্লাহ  ﷺ আরও বলেন:
যে ব্যক্তি মাসিক চলমান থাকা কোন মহিলার সাথে সহবাস করে, অথবা কোন মহিলার সাথে তার পায়ুপথ দিয়ে সহবাস করে, বা কোন জ্যোতিষীর কাছে যায়, সে মুহাম্মাদের উপর যা নাযিল হয়েছিল তার সাথে কুফুরি করেছে”। (আত-তিরমিযি, নং ১/২৪৩; আরও দেখুন সাহিহ আল-জামি, ৫৯১৮।

যদিও স্বাভাবিক রুচিবোধ সম্পন্ন বেশীরভাগ স্ত্রীরাই এমনটা করতে অস্বীকৃতি জানায়, তারপরও এমন কিছু স্বামী আছে যারা তাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দেয়ার ভয় দেখায় যদি তারা (এই বিষয়ে) তাদের কথা না শুনে, তাদের মধ্যে কয়েকজন এমনকি নিজেদের স্ত্রীদেরকে ধোঁকাও দেয় – যারা (যেসব মহিলারা) নিজেরা আলিমদের কাছে গিয়ে এরকম বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করে – তারা (এসব স্বামীরা) তাদেরকে (তাদের স্ত্রীদেরকে) ধোঁকা দিয়ে বলে যে এমনটা করা বৈধ! কেননা রাসুল ﷺ বলেছেন যে একজন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে যেভাবে ইচ্ছা সহবাস করতে পারে, সামনে থেকে অথবা পিছন থেকে, যতক্ষণ পর্যন্ত সহবাস ওই জায়গা দিয়ে হচ্ছে যেখান দিয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ করে!

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, পায়ুপথ হচ্ছে এমন এক জায়গা যেখান থেকে বর্জ্য নিষ্কাশিত হয়, এটা সেই জায়গা নয় যেখান দিয়ে সন্তান জন্মলাভ করে থাকে।   

আরও একটি কারণ হচ্ছে, যেজন্যে কিছু লোক এই অনৈতিক কাজটি করে তা হচ্ছে যে, তারা বিবাহিত জীবনে (যা হওয়া উচিৎ ছিল পবিত্র) প্রবেশ করে কিছু জাহিলি (অজ্ঞতাপূর্ণ) সংস্কৃতি আর উদ্ভট চর্চা নিয়ে, অথবা অশ্লীল ফিল্মে দেখে থাকা কোন দৃশ্যের স্মৃতি নিয়ে, যা থেকে তারা আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করেনি।

এই কাজটি হারাম যদিওবা তারা (স্বামী এবং স্ত্রী) উভয়ে এই কাজে সম্মতি দেয়। পারস্পরিক সম্মতি একটি হারাম কাজকে হালাল বানিয়ে দিতে পারে না। 

আমি আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করি যে, তিনি যেন আমাদেরকে তার দ্বীন সম্পর্কে প্রকৃত বুঝ দান করেন এবং আমাদেরকে এর সীমানা(বাউন্ডারি)  মেনে চলার সামর্থ্য দেন, কেননা তিনি হচ্ছেন সর্বশ্রোতা, এবং তিনি  সেই সত্তা যিনি দু’আ কবুল করে থাকেন।

► আপনার যদি পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করুন ও পরবর্তী  আপডেট পেতে পেজটি লাইক দিয়ে রাখুন। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি মানুষকে হিদায়াতের দিকে ডাকে তার জন্য ঠিক ঐ পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে, যে পরিমাণ পাবে তাকে অনুসরণকারীরা।” [সহীহ মুসলিম/২৬৭৪,৬৮০৪]

Wednesday, January 16, 2019

মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসূমহ

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
লেখকঃ হাবিবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল | অনুবাদক : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া | প্রকাশনায় : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ

إن الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين، أما بعد

মা-বাবা ছোট শব্দ, কিন্তু এ দুটি শব্দের সাথে কত যে আদর, স্নেহ, ভালবাসা রয়েছে  তা পৃথিবীর কোন মাপযন্ত্র দিয়ে নির্ণয় করা যাবে না। মা-বাবা কত না কষ্ট করেছেন, না খেয়ে থেকেছেন, অনেক সময় ভাল পোষাকও পরিধান করতে পারেন নি, কত না সময় বসে থাকতেন সন্তানের অপেক্ষায়। সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছেন, তারাই বুঝেন মা বাবা কত বড় সম্পদ। যেদিন থেকে মা বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন সেদিন থেকে মনে হয় কী যেন হারিয়ে গেল,তখন বুক কেঁপে উঠে, চোখ থেকে বৃষ্টির মত পানি ঝরে, কী শান্তনাই বা তাদেরকে দেয়া যায়!  সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছে তারা কি মা-বাবার জন্য কিছুই করবে না?। এত কষ্ট করে আমাদের কে যে মা-বাবা লালন পালন করেছেন তাদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? অবশ্যই আছে। আলোচ্য প্রবন্ধে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মৃত মা-বাবা জন্য কী ধরনের আমল করা যাবে এবং যে আমলের সওয়াব তাদের নিকট পৌছবে তা উল্লেখ করা হলো:
১. বেশী বেশী দু‘আ করা 
মা-বাবা দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর সন্তান মা-বাবার জন্য বেশী বেশী দু‘আ করবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কী দু‘আ করবো তাও শিক্ষা দিয়েছেন । আল-কুরআনে এসেছে,

 رَبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [الاسراء: ٢٤]

‘‘হে আমার রব, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’’ [সূরা বানী ইসরাঈলঃ ২৪]

رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡحِسَابُ ٤١﴾ [ابراهيم: ٤١]

‘‘হে আমাদের রব, রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করে দিন’’ [সুরা ইবরাহীমঃ৪১]
এছাড়া আলস্নাহ রাববুল আলামীন পিতা-মাতার জন্য দূ‘আ করার বিশেষ নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেনঃ

 رَّبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيۡتِيَ مُؤۡمِنٗا وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۖ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارَۢا ٢٨ ﴾ [نوح: ٢٨

‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না ’[সূরা নুহ: ২৮] ।

মা-বাবা এমন সন্তান রেখে যাবেন যারা তাদের জন্য দোয়া করবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ».

অর্থ: মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না-১. সদকায়ে জারিয়া  ২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দু‘আ করে [সহিহ মুসলিম: ৪৩১০]
মূলত: জানাযার নামায প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ স্বরূপ।
 ২. দান-ছাদকাহ করা, বিশেষ করে সাদাকায়ে জারিয়াহ প্রদান করাঃ
মা-বাবা বেচে থাকতে দান-সাদকাহ করে যেতে পারেন নি বা বেচে থাকলে আরো দান-সদকাহ করতেন, সেজন্য তাদের পক্ষ থেকে  সন্তান দান-সদকাহ করতে পারে। হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَجُلاً أَتَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّىَ افْتُلِتَتْ نَفْسَهَا وَلَمْ تُوصِ وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ أَفَلَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا قَالَ « نَعَمْ »

অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ ‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমার মা হঠাৎ মৃতু বরণ করেছেন। তাই কোন অছিয়ত করতে পারেন নি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-ছাদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে ছাদকা করলে তিনি কি এর ছাওয়াব পাবেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন।’’ [সহীহ মুসলিম:২৩৭৩]
তবে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে সাদাকায়ে জারিয়া বা প্রবাহমান ও চলমান সাদাকা প্রদান করা। যেমন পানির কুপ খনন করা, (নলকুপ বসানো, দ্বীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব ও প্রতিষ্ঠান তৈরী করা, স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কাজ করা। ইত্যাদি।
 ৩. মা-বাবার পক্ষ থেকে সিয়াম  পালনঃ
মা-বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় যদি তাদের কোন মানতের সিয়াম কাযা থাকে, সন্তান তাদের পক্ষ থেকে সিয়াম পালন করলে তাদের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

«مَنْ مَاتَ  وَعَلَيْهِ صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ»

অর্থ: ‘‘যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল এমতাবস্থায় যে তার উপর রোজা ওয়াজিব ছিল। তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিসগণ রোজা রাখবে’’ [সহীহ বুখারী:১৯৫২]।
অধিকাংশ আলেমগণ এ হাদীসটি শুধুমাত্র ওয়াজিব রোযা বা মানতের রোযার বিধান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে নফল সিয়াম রাখার পক্ষে দলীল নাই।
 ৪. হজ্জ বা উমরাহ করাঃ
মা-বাবার পক্ষ থেকে হজ্জ বা উমরাহ করলে তা আদায় হবে এবং তারা  উপকৃত হবে। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

«أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ جَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ إِنَّ أُمِّي نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ فَلَمْ تَحُجَّ حَتَّى مَاتَتْ أَفَأَحُجُّ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ حُجِّي عَنْهَا أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً اقْضُوا اللَّهَ فَاللَّهُ أَحَقُّ بِالْوَفَاءِ»

অর্থ: ‘‘ জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমণ করে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হজ্জ করার মানত করেছিলেন কিন্তু তিনি হজ্জ সম্পাদন না করেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ কর। তোমার কি ধারণা যদি তোমার মার উপর ঋণ থাকতো তবে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না ? সুতরাং আল্লাহর জন্য তা আদায় কর। কেননা আল্লাহর দাবী পরিশোধ করার অধিক উপযোগী’’ [সহীহ বুখারী: ১৮৫২]
তবে মা-বাবার পক্ষ থেকে যে লোক হজ্জ বা ওমরাহ করতে চায় তার জন্য শর্ত হলো সে আগে নিজের হজ্জ-ওমরাহ করতে হবে।
 ৫. মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করাঃ
মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করলে তার ছাওয়াব দ্বারা তারা উপকৃত হবে। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِكَبْشٍ أَقْرَنَ يَطَأُ فِى سَوَادٍ وَيَبْرُكُ فِى سَوَادٍ وَيَنْظُرُ فِى سَوَادٍ فَأُتِىَ بِهِ لِيُضَحِّىَ بِهِ فَقَالَ لَهَا « يَا عَائِشَةُ هَلُمِّى الْمُدْيَةَ » ثُمَّ قَالَ « اشْحَذِيهَا بِحَجَرٍ ». فَفَعَلَتْ ثُمَّ أَخَذَهَا وَأَخَذَ الْكَبْشَ فَأَضْجَعَهُ ثُمَّ ذَبَحَهُ ثُمَّ قَالَ « بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ ». ثُمَّ ضَحَّى بِهِ.

অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি শিংযুক্ত দুম্বা উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন, যার পা কালো, চোখের চতুর্দিক কালো এবং পেট কালো। অতঃপর তা কুরবানীর জন্য আনা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, হে আয়েশা! ছুরি নিয়ে আস, তারপর বললেন, তুমি একটি পাথর নিয়ে তা দ্বারা এটাকে ধারালো কর। তিনি তাই করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুরি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে শুইয়ে দিলেন। পশুটি যবেহ্ করার সময় বললেন, বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ তুমি এটি মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধর এবং সকল উম্মাতে মুহাম্মাদীর পক্ষ থেকে কবুল কর”। এভাবে তিনি তা দ্বারা কুরবানী করলেন। [ সহীহ মুসলিম:৫২০৩]
 ৬. মা-বাবার ওসিয়ত পূর্ণ করা
মা-বাবা শরীয়াহ সম্মত কোন ওসিয়ত করে গেলে তা পূর্ণ করা সন্তানদের উপর দায়িত্ব। রাশীদ ইবন সুয়াইদ আসসাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنَّ أُمِّي أَوْصَتْ أَنْ نُعْتِقُ عَنْهَا رَقَبَةً ، وَعِنْدِي جَارِيَةٌ سَوْدَاءُ ، قَالَ : ادْعُ بِهَا ، فَجَاءَتْ ، فَقَالَ : مَنْ رَبُّكِ ؟ قَالَتِ : اللَّهُ ، قَالَ : مَنْ أَنَا ؟ قَالَتْ : رَسُولُ اللَّهِ ، قَالَ : أَعْتِقْهَا ، فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ».

অর্থ: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা একজন দাসমুক্ত করার জন্য ওসিয়ত করে গেছেন। আর আমার নিকট কালো একজন দাসী আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ডাকো, সে আসল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার রব কে ? উত্তরে সে বলল, আমার রব আল্লাহ। আবার প্রশ্ন করলেন আমি কে ? উত্তরে সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসুল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে মুক্ত করে দাও; কেন না সে মু’মিনা । [সহীহ ইবন হিববান :১৮৯]
 ৭. মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করা 
মা-বাবার বন্ধুদের সাথে ভাল ব্যবহার করা, সম্মান করা, তাদেরকে দেখতে যাওয়া,তাদেরকে হাদিয়া দেয়া। এ বিষয়ে হাদীসে উল্লেখ আছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَجُلاً مِنَ الأَعْرَابِ لَقِيَهُ بِطَرِيقِ مَكَّةَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ عَبْدُ اللَّهِ وَحَمَلَهُ عَلَى حِمَارٍ كَانَ يَرْكَبُهُ وَأَعْطَاهُ عِمَامَةً كَانَتْ عَلَى رَأْسِهِ فَقَالَ ابْنُ دِينَارٍ فَقُلْنَا لَهُ أَصْلَحَكَ اللَّهُ إِنَّهُمُ الأَعْرَابُ وَإِنَّهُمْ يَرْضَوْنَ بِالْيَسِيرِ. فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ إِنَّ أَبَا هَذَا كَانَ وُدًّا لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَإِنِّى سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ « إِنَّ أَبَرَّ الْبِرِّ صِلَةُ الْوَلَدِ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ ».

অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, একবার মক্কার পথে চলার সময় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এক বেদুঈন এর সাথে দেখা হলে তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং তাকে সে গাধায় চড়ালেন যে গাধায় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উপবিষ্ট ছিলেন এবং তাঁর (আব্দুল্লাহ) মাথায় যে পাগড়িটি পরা ছিলো তা তাকে প্রদান করলেন। আব্দুল্লাহ ইবান দীনার রাহেমাহুল্লাহ বললেন, তখন আমরা আব্দুল্লাহকে বললাম: আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক! এরা গ্রাম্য মানুষ: সামান্য কিছু পেলেই এরা সন্তুষ্ট হয়ে যায়-(এতসব করার কি প্রয়োজন ছিলো?) উত্তরে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তার পিতা, (আমার পিতা) উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বন্ধু ছিলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি “পুত্রের জন্য পিতার বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভাল ব্যবহার করা সবচেয়ে বড় সওয়াবের কাজ’’ [সহীহ মুসলিম:৬৬৭৭]।
মৃতদের বন্ধুদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলও আমাদেরকে উৎসাহিত করে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

«إِذَا ذَبَحَ الشَّاةَ فَيَقُولُ « أَرْسِلُوا بِهَا إِلَى أَصْدِقَاءِ خَدِيجَةَ »

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন বকরী যবেহ করতেন, তখনই তিনি বলতেন, এর কিছু অংশ খাদীজার বান্ধবীদের নিকট পাঠিয়ে দাও [সহীহ মুসলিম: ৬৪৩১]
 ৮. মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখা
সন্তান তার মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصِلَ أَبَاهُ فِي قَبْرِهِ ، فَلْيَصِلْ إِخْوَانَ أَبِيهِ بَعْدَهُ»

‘যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালবাসে, সে যেন পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখে’ [সহীহ ইবন হিববান:৪৩২]
 ৯. ঋণ পরিশোধ করা
মা-বাবার কোন ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করা সন্তানদের উপর বিশেষভাবে কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের পরিশোধ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«نَفْسُ الْمُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِهً حَتَّى يُقْضَى عَنْهُ».

অর্থ: ‘‘মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ তা তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়”। [সুনান ইবন মাজাহ:২৪১৩]
ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতের যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়; এমনকি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয় । হাদীসে  আরো এসেছে,

«مَا دَخَلَ الْجَنَّةَ حَتَّى يُقْضَى دَيْنُهُ»

অর্থ: যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [নাসায়ী ৭/৩১৪; তাবরানী ফিল কাবীর ১৯/২৪৮; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/২৯]
 ১০. কাফফারা আদায় করা   
মা-বাবার কোন শপথের কাফফারা,ভুলকৃত হত্যাসহ কোন কাফফারা বাকী থাকলে সন্তান তা পূরণ করবে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে,

﴿وَمَن قَتَلَ مُؤۡمِنًا خَطَ‍ٔٗا فَتَحۡرِيرُ رَقَبَةٖ مُّؤۡمِنَةٖ وَدِيَةٞ مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰٓ أَهۡلِهِۦٓ إِلَّآ أَن يَصَّدَّقُواْۚ ﴾ [النساء: ٩٢] 

অর্থ: যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে সেটা ভিন্ন কথা) [ সূরা আন-নিসা:৯২]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

« مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَأْتِهَا وَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ ».

অর্থ: ‘‘ যে ব্যক্তি কসম খেয়ে শপথ করার পর তার থেকে উত্তম কিছু করলেও তার কাফফারা অদায় করবে’’ [সহীহ মুসলিম: ৪৩৬০] ।
এ বিধান জীবিত ও মৃত সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। দুনিয়ার বুকে কেউ অন্যায় করলে তার কাফফারা দিতে হবে। অনুরূপভাবে কেউ অন্যায় করে মারা গেলে তার পরিবার-পরিজন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাফফারা প্রদান করবেন।
 ১১. ক্ষমা প্রার্থনা করাঃ
মা-বাবার জন্য আল্লাহর নিকট বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। সন্তান মা-বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। হাদীসে বলা হয়েছে,

«عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : تُرْفَعُ لِلْمَيِّتِ بَعْدَ مَوْتِهِ دَرَجَتُهُ . فَيَقُولُ : أَيْ رَبِّ ، أَيُّ شَيْءٍ هَذِهِ ؟ فَيُقَالُ : وَلَدُكَ اسْتَغْفَرَ لَكَ»

অর্থ: আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে হে আমার রব, আমি তো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল আসলো ? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো’’ [আল-আদাবুল মুফরাদ:৩৬]।
মা-বাবা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

«عَنْ عُثْمَانَ ، قَالَ : وَقَفَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَبْرِ رَجُلٍ وَهُوَ يُدْفَنُ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهُ قَالَ : اسْتَغْفِرُوا لأَخِيكُمْ وَسَلُوا اللَّهَ لَهُ بالثَّبَاتِ ؛ فَإِنَّهُ يُسْأَلُ الآنَ».

অর্থ: উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পার্শ্বে দাঁড়ালেন এবং বললেন ‘‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য ঈমানের উপর অবিচলতা ও দৃঢ়তা কামনা কর, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে’’ [মুসনাদুল বাজ্জার :৪৪৫]।
তাই সুন্নাত হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিকে কবরে দেয়ার পর তার কবরের পার্শ্বে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার জন্য প্রশ্নোত্তর সহজ করে দেয়া, প্রশ্নোত্তর দিতে সমর্থ হওয়ার জন্য দো‘আ করা।
 ১২. মান্নত পূরণ করা 
মা-বাবা কোন মান্নত করে গেলে সন্তান তার পক্ষ থেকে পূরণ করবে। ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

«أَنَّ امْرَأَةً نَذَرَتْ أَنْ تَصُومَ شَهْرًا فَمَاتَتْ فَأَتَى أَخُوهَا النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ :« صُمْ عَنْهَا ».

অর্থ: কোন মহিলা রোজা রাখার মান্নত করেছিল, কিন্তু সে তা পূরণ করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করল। এরপর তার ভাই এ বিষয়ে  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি বলরেন, তার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন কর। [সহীহ ইবন হিববান:২৮০]
 ১৩. মা-বাবার ভাল কাজসমূহ জারী রাখা 
মা-বাবা যেসব ভাল কাজ অর্থাৎ মসজিদ তৈরী করা, মাদরাসা তৈরী করা, দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীসহ যে কাজগুলো করে গিয়েছেন সন্তান হিসাবে তা যাতে অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা করা। কেননা এসব ভাল কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে। হাদীসে এসেছে,

«مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ »

‘‘ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’। [সুনান আততিরমীযি : ২৬৭০]

«مَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ»

যে ব্যক্তির ইসলামের ভাল কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদেও সওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:২৩৯৮]।
 ১৪. কবর যিয়ারত করা  
সন্তান তার মা-বাবার কবর যিয়ারত করবে। এর মাধ্যমে সন্তান এবং মা-বাবা উভয়ই উপকৃত হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَقَدْ أُذِنَ لِمُحَمَّدٍ فِى زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الآخِرَةَ»

অর্থ: আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম,অত:পর মুহাম্মাদের মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]।
যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]।
কবর যিয়ারত কোন দিনকে নির্দিষ্ট করে করা যাবে না। কবর যিযারত করার সময় বলবে,

«السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ ، نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ».

অর্থ: কবরবাসী মুমিন-মুসলিম আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক । নিশ্চয় আমরা আপনাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আল্লাহর কাছে আপনাদের এবং আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। [সুনান ইবন মাজাহ :১৫৪৭]
 ১৫. ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করা    
মা-বাবা কারো সাথে কোন ভাল কাজের ওয়াদা করে গেলে বা এমন ওয়াদা যা তারা বেচে থাকলে করে যেতেন, সন্তান যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

وَأَوۡفُواْ بِٱلۡعَهۡدِۖ إِنَّ ٱلۡعَهۡدَ كَانَ مَسۡ‍ُٔولٗا ٣٤ ﴾ [الاسراء: ٣٤] 

অর্থ: আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [ সূরা বনী ইসরাঈল:৩৪]
 ১৬.কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা
মা-বাবা বেচে থাকতে কোন গুনাহের কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা বন্ধ করবে বা শরীয়াহ সম্মতভাবে সংশোধন করে দিবে। কেননা আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا ».

এবং যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহবান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:৬৯৮০]।
 ১৭.মা-বাবার পক্ষ থেকে মাফ চাওয়া 
মা-বাবা বেচে থাকতে কারো সাথে খারাপ আচরণ করে থাকলে বা কারো উপর যুলুম করে থাকলে বা কাওকে কষ্ট দিয়ে থাকলে মা-বাবার পক্ষ থেকে তার কাছ থেকে মাফ মাফ চেয়ে নিবে অথবা ক্ষতি পূরণ দিয়ে দিবে।  কেননা হাদীসে এসেছে,

«عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ : أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : أَتَدْرُونَ مَنِ الْمُفْلِسُ ؟ قَالُوا : الْمُفْلِسُ فِينَا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ ، وَلاَ مَتَاعَ لَهُ ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الْمُفْلِسُ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَتِهِ وَصِيَامِهِ وَزَكَاتِهِ ، فَيَأْتِي وَقَدْ شَتَمَ هَذَا ، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا ، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا ، فَيَقْعُدُ ، فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُعْطِيَ مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ ، فَطُرِحَ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান নিঃস্ব ব্যক্তি কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো গরীব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরীব যে, কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমল নামা দিয়ে দেয়া হবে। এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [সুনান আততিরমিযি :২৪২৮]
সুতরাং এ ধরনের নিঃস্ব ব্যক্তিকে মুক্ত করার জন্য তার হকদারদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া সন্তানের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
অল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মা বাবার জন্য আমলগুলো করার তাওফীক দিন। আমীন!

وصلى الله على نبينا محمد وعلي اله وأصحابه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين- وأخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين

সুরা: ইয়াসিন আরবি & বাংলা উচ্চারণ

সুরা: ইয়াসিন بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ আরবি & বাংলা উচ্চারণ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল...